Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১

৩ দফা বৈঠকের পরও বিএসএফের কর্মকান্ডে আশ্বস্ত নয় সীমান্তবাসী


দৈনিক পরিবার | মো. সিফাত রানা জানুয়ারি ১০, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম ৩ দফা বৈঠকের পরও বিএসএফের কর্মকান্ডে আশ্বস্ত নয় সীমান্তবাসী

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করাকে কেন্দ্র করে  বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে ৩ দিন ধরে উত্তেজনা চললেও গত বুধবার সন্ধ্যায় সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের পতাকা বৈঠকের পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়েছে। তবে দফায় দফায় পতাকা বৈঠকের পরও বিজিবির বাধা উপেক্ষা করে বিএসএফ এর কাটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টার কারনে এখনও আস্বস্ত হতে পারছেনা সীমান্তবাসী। 
সোমবার ও মঙ্গলবার এ নিয়ে দুই দফা এবং বুধবার দুপুরে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে ২ দফা সহ ৪ দফা পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোন সিধান্তে আসতে পারেনি দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী।সর্বশেষ সন্ধ্রায় ভারতের মাহদীপুরে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে একটি বৈঠকের পর কিছুটা স্বস্তি এসেছে সীমান্তে। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার বৈঠকে আর বেড়া নির্মানের চেষ্টা না করার আশ্বাস দেয়ার পরও তা অমান্য করে কাজ করার চেষ্টা করলে উত্তেজনা দেখা দেয় সীমান্তে। 
এদিকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় সীমান্তে অতিরিক্ত জেয়ান দুই দেশই সরিয়ে নিয়েছে।ভারত ও বাংলাদেশের উভয় সীমান্তেই তৈরী করা বাংকারগুলো রয়ে গেছে।নির্মান সামগ্রীর কিছু অংশ সরানো হলেও কিছু অংশ পড়ে রয়েছে।বিজি ও বিএসএফ সর্তক অবস্থায় নজরদারী অব্যাহত রখেছে।আর দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে সীমান্তবাসীদের যে জটলা ছিল সেটি আর ছিলনা। সব মিলিয়ে সীমান্ত পরিস্থিতি অনেকটায় শান্ত দেখা গেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের চৌকা সীমান্তের ওপারে সুখদেবপুর সীমান্তে আর্ন্তজাতিক সীমান্ত পিলার ১৭৭/১এস ও ২ এস এলাকায় বিএসএফ প্রায় ৬ মাস আগে সীমান্তের নোম্যানসল্যান্ড থেকে ৫০ গজ এগিয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে বাংলাদেশের দিকে ভারত একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে। সর্বশেষ গত ৫ জানুয়ারি বিকেলে সীমান্ত পিলার ১৭৭/২-এস থেকে নোম্যান্স ল্যান্ডের আনুমানিক ১০০ গজ ভারতের ভেতরে বাংলাদেশ সাইডে চৌকা মাঠ এলাকার জিআর নম্বর ০৪৭৩৭২ এমএস ৭৮ ডি/২ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য ভারতের ১১৯ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সবদেলপুর ক্যাম্পের উদ্যোগে মাটি খননের কাজ শুরু করা হয়। ঘটনাটি জানতে পেরে বিজিবির চৌকা সীমান্তের টহল দল পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সেই কাজে বাধা দেয়। বৈঠকের পরও মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কাঁটাতারের বেড়া দিতে বিএসএফ আবার মাটি খননের কাজ শুরু করে। খবর পেয়ে বিজিবি গিয়ে তৎক্ষণাৎ বাধা দেয়। তবে বিএসএফ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় নির্মাণকাজ আবারও শুরু করে। কাজটি সম্পন্ন করার জন্য অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করলে এই উত্তেজনা তৈরি হয়। ভারতীয় নাহরিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে বাংলাদেশী নাগরিকরাও সীমান্তে জড়ো হতে থাকে। সীমান্তে অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করে বিজিবি ও বিএসএফ। বুধবার সকালে আবারো সীমানা আইন লঙ্ঘন করে কাটা তাড়বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করলে বাধা দেয় বিজিবি। 
এদিকে, সীমান্তে বাংলাদেশের ভূমি রক্ষায় স্থানীয় বাংলাদেশী নাগরিকরা ক্ষোভ জানিয়েছেন এবং বিএসএফের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে বিজিবির সাথে তারাও দিনব্যাপী সীমান্তে অবস্থান নেয়। 
চৌকা সীমান্তের বিশ্বনাথপুর গ্রামের মইন আহম্মেদ জানান, এ স্থানে নদীর পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মান করার সুযোগ পেয়ে বিএসএফ বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং অবৈধভাবে কাঁটা তারের বেড়া দেয়ার চেষ্টা করছে।তাদের চেষ্টা আমরা সীমান্তবাসী কোনভাবেই সফল হতে দেবনা। এক ইঞ্চি জমিও তাদের দখল করতে দেয়া হবেনা।আর্ন্তজতিক আইন অনুসারী নোম্যান্স ল্যান্ড ছেড়ে তাদের বেড়া দিতে হবে।
অপর বাসিন্দা ডালিম জানান, নোম্যান্স ল্যান্ডের আইন ভেঙ্গে বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে তারা তারবেড়া নির্মান করলে বেড়ার পাশের কৃষকরা চাষাবাদ করতে গিয়ে ঝুঁকিতে পড়বে।এমনিতেই বিএসএফ কথায় কথায় গুলি চালায় ও আগ্রাসী মনোভাব দেখায়, বেড়া নির্মান হলে এসব জমির মালিকরা আর নিরাপত্তার অভাবে জমি চাষ করতে পারবেনা।
স্থানীয় কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, তার জমিতে ভুট্টা লাগানো আছে কিন্তুু ফসল পরিচর্যা করতে আসতে ভয় পাচ্ছেন।পরিচর্যার অভাবে ফসলের ক্ষতি হবার আশংকা প্রকাশ করেন তিনি। 
অপর কৃষক হারুন রশিদ জানান, তার চাচার ৩ বিঘার মধ্যে প্রায় ১ বিঘা শরিষা ক্ষেত লোকসমাগমের কারনে নষ্ট হয়ে গেছে।আর এর জন্য বিএসএফের আইন লঙ্ঘন করে ভারতীয়দের জমায়েত করে জোর করে কাজ করারকে দায়ী করেন।
তিনি আরও জানান, তার জমির পাশের প্রায় ১৫ কাঠা জমির গম পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
বিনোদপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য মো: বাদশাহ জানান, গত ৩ দিনের সীমান্ত উত্তেজনা পরিস্থিতির কারনে সীমান্তবর্তী জমিগুলোর ৩ বিঘা ভুট্টা, গম এবং শরিষা নষ্ট হয়েছে।বিএসএফের বাড়াবাড়ির কারনে সীমান্তে লোকসমাগমের কারনেই ফসলগুলোর ক্ষতি হয়েছে।  
চৌকা সীমান্ত এলাকার বিনোদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রুহুল আমীন জানান, বিএসএফ স্থানীয় ভারতীয়দের জমায়েত করে সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টার কারনে বাংলাদেশীরাও সীমান্তে জড়ো হয়। সীমান্তের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। ভারতবিরোধী নানা স্লোগান দেয স্থানীয়রা। এ সময় সীমান্তের ওপার থেকে ভারতীয় নাগরিকদেরও স্লোগান শোনা যায়।
এদিকে বিজিবির একটি সুত্র জানায়, বুধবার দুপুরের পতাকা বৈঠকের পরপরই বিকেলে সোনা মসজিদ স্থলবন্দরের বিপরীতে মাহদীপুরে সেক্টর কমান্ডার পযার্য়ের  উচ্চ পর্যায়ের একটি সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৯ টা পর্যন্ত বৈঠক চলে এবং দুই পক্ষ আলোচনার মধ্যেমে বিএসএফ বা বিজিবির হেড কোয়াটারের চিঠি বা অনুমতি ছাড়া সীমান্তে কোনো ধরনের বেড়া কিংবা স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি উভয় দেশের বাহিনী তাদের নিজ নিজ ভূখণ্ডের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত  জনসাধারণকে সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
বৈঠকে ভারতের পক্ষে মালদা সেক্টরের ডিআইজি  তরুণ কুমার গৌতমের নেতৃত্বে  ১১৯ বিএসএফ ব্যাটেলিয়ানের কম্যান্ডিং অফিসার  সুরাজ শিং সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিজিবির রাজশাহী সেক্টরের কনেল মো ইমরান ইবনে রৌউফ।
এ ব্যাপারে ৫৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল গোলাম কিবরিয়া জানান, সফল ভাবে সভা সম্পন্ন হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপাতত বিএসএফ অতিরিক্ত জনবল ও বেসামরিক ব্যক্তিদের সরিয়ে নিয়ে নির্মাণকাজ বন্ধ রাখবে। বিজিবি’র প্রপোজালটা জানানো হয়েছে তাদের।তারা জানিয়েছে তাদেরও উর্দ্ধতন কর্তপক্ষ আছে।আমাদের আপত্তির বিষয়টি তারা তাদের উর্দ্ধতন কর্তপক্ষকে জানাবেন। সেখান থেকে জানার পর বোঝা যাবে ভারত সীমান্ত বেড়া নির্মান কোথায় কখন করবে বা করবে কিনা। তবে বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিজিবি সতর্ক ভাবে অবস্থান করছে। উভয় দেশের স্বাভাবিক টহল অব্যাহত থাকবে।তবে উভয়দেশই অতিরিক্ত জোয়ান এবং সীমান্তবাসীকে সরিয়ে নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, আর্ন্তজাতিক সীমান্ত পিলার ১৭৭/১এস ও ২এস এলাকায় পাঁচ/ছয় মাস আগে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে সীমান্তের নোম্যানসল্যান্ড থেকে ৫০ গজ এগিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে (আন্তর্জাতিক শূণ্যরেখার ১০০ গজের মধ্যে) ভারত একটি কাঁচা রাস্তা নির্মাণ করে। সেই রাস্তায় পাশে পুনরায়ঃ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করার সময় এই উত্তেজনা তৈরি হয়।

Side banner