নেত্রকোনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বহুতল ভবন নির্মাণে শতবর্ষী দুটি বৃষ্টি গাছ (রেইন ট্রি) কাটার পায়তারার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে ‘প্রকৃতি বাঁচা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই মানববন্ধন আয়োজন করা হয়। এতে শহরের বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়াও নানা শ্রেণি-পেশার লোকজন অংশ নেন।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনউদ্যোগের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রাবন্ধিক হায়দার জাহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কবি তানভীর জাহান চৌধুরীর পরিচালনায় ঘণ্টা সময়ব্যাপী কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য দেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল, জেলা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব মাহবুবুল কিবরিয়া চৌধুরী, নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সদস্য সুফি কবি এনামুল হক, নেত্রকোনা সরকারি মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ওয়ালী উল্লাহ, বাংলার নেত্র পত্রিকার সম্পাদক কামাল হোসেন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, কণ্ঠশিল্পী সাদমান পাপ্পু, জেলা ছাত্রলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী প্রমুখ।
মানববন্ধন ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের প্রাণকেন্দ্র মোক্তারপাড়ায় অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নেত্রকোনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে একটি পাঁচতলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় সরকার। জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে চার কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে বিদ্যালয়ের মাঠের এক পাশে এবং প্রধান ফটকের পাশে থাকা দুটি শত বছর বয়সী বৃষ্টি গাছ কাটার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ জন্য বন বিভাগের অনুমতি সম্পন্ন করে প্রায় ৭২ হাজার টাকায় গাছ বিক্রিও করা হয়। দুই এক দিনের মধ্যে গাছগুলো কাটার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। আজ এর প্রতিবাদে স্থানীয় বৃক্ষপ্রেমীরা মানববন্ধনের ডাক দেয়। প্রকৃতি বাঁচাও আন্দোলনের ব্যানারে এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জেলা সুজনের সভাপতি শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ‘আমরা বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ বা উন্নয়নের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এভাবে নির্বিচারে শত বছরের দুটি গাছ কেটে ফেলা হবে তা কখনো মেনে নেয়া যায় না। প্রকৌশলীরা যখন ভবনের নকশা করেন তখন স্থানীয় লোকজনদের মতামত নিয়ে নকশা করতে পারতেন।’
প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব ও ওই এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুর কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘ছোটকাল থেকেই অর্থাৎ ছয় দশক ধরে আমরা দেখে আসছি এই গাছগুলোতে পাখির অভয়ারণ্য। ছায়া সুনিবিড় এই স্থানটিতে এসে পথচারীসহ স্থানীয়দের প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এই গাছগুলো শহরের অক্সিজেন। আমরা গাছ কাটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। প্রয়োজন হলে কঠোর আন্দোলনে যাব। আমরা চাই গাছগুলোকে রেখে নকশা পরিবর্তন করে ভবন নির্মাণ করা হোক।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপ্না সরকার বলেন, ‘দুটি গাছের মধ্যে একটি গাছ ভেতর-বাহির নষ্ট হয়ে গেছে। অন্য গাছটির ডালপালাও নষ্ট হয়ে গেছে। ডালপালা ভেঙে এতে মাঝে মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আহত হয়। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে গাছ কাটার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক বানানী বিশ্বাস বলেন, ‘এ ব্যাপারে কী করা যায়; বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’
আপনার মতামত লিখুন :