লক্ষ্মীপুরে ওয়ে হাউজিং নামে একটি কোম্পানির বহুতল ভবনের পাইলিংয়ের সময় জনগুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক ভেঙে গেছে। এছাড়া এ ঘটনায় ভেঙে গেছে দুটি দোকান ও একটি কবরস্থানের একাংশ। বর্তমানে আশপাশের ভবনগুলোও রয়েছে ভাঙন ঝুঁকিতে। এ ঘটনায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায় সহশ্রাধিক পরিবারের রান্নাবান্না অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী জুলফিকার জুয়েল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এর আগে বুধবার (৮ জানুয়ারি) রাত ২টার দিকে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার শাখারি পাড়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পৌর কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায়, ভেঙে যাওয়া দোকানগুলোর পেছনে একটি পুকুর রয়েছে। হাউজিংয়ের অনিয়ন্ত্রিত পাইলিংয়ের কারণে মাটির তলদেশ পানির স্তর সরে উপরিভাগের মাটি দেবে যায়। ভেকু দিয়ে প্রায় ৩০ ফুট মাটি খুড়ে নির্মাণকাজ চালাচ্ছিল হাউজিং কোম্পানিটি। এতে মাটির তলদেশের পানি নির্মাণাধীন এলাকায় উঠে আসে। একপর্যায়ে পানির চাপ বেড়ে রাস্তা ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যায়। এতে পাশের দুটি দোকান ভেঙে গেছে। যুক্তবাংলা আইন পরিষদের সদস্য মরহুম আব্দুল হাকিম উকিলের কবরস্থানটিও ভেঙে গেছে। আশপাশের বেশ কিছু ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে অনেকেই ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আগুন ধরে যাওয়ায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ সড়কের প্রায় ১ হাজার পরিবারের রান্নাবান্না অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ্মীপুর মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীসহ এ রুটে চলাচলকারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিক শাহিন কাদির রিপন বলেন, অনিয়ন্ত্রিত পাইলিংয়ের কারণে মাটি সরে গিয়ে আমার দুটি দোকান ভেঙে গেছে। এতে আমার অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় ভবন মালিক শামছুল আলম বলেন, নিয়ম বহির্ভূত পাইলিংয়ের কারণে সড়কে দেবে গেছে। পাশে দুটি দোকান ভেঙে গেছে। আমার ভবনটি এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের লক্ষ্মীপুর কার্যালয় ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) এস এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় লাইনে আগুন ধরে যাওয়ায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগামী রোববার কুমিল্লা থেকে লোকজন এসে কাজ করবে। কাজ শেষে গ্যাস সংযোগ চালু হবে।
লক্ষ্মীপুর পৌরসভার প্রকৌশলী জুলফিকার জুয়েল বলেন, ওয়ে হাউজিংকে ৭ তলা ভবনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তারা ১০ তলা ভবনের পুনরায় অনুমতি নিয়েছে কিনা তা আমাদের জানা নেই। পাশেই পুকুর থাকায় পাইলিংয়ের সময় মাটির নিচের স্তরের পানি ওপরে উঠে আসে। যার ফলে সড়কটি ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এতে সড়ক আর ড্রেনের প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আপাতত তাদের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিপূরণ ও সড়ক সংস্কার শেষ হলেই কাজের অনুমতি দেওয়া হবে। সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
ওয়ে হাউজিংয়ের এজিএম হাসান আহমেদ বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ীই কাজ করছিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে ঘটনাটি ঘটে গেছে। আমরা ভবনটি ১০ তলা করব, তা প্রস্তাবিত। পৌরসভার অনুমোদন অনুযায়ী আপাতত ৭ তলা ভবনই হবে। সড়ক ও দোকান মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হবে। সড়কের যেন বেশি ক্ষতি না হয়, সেজন্য আমরা ইতিমধ্যে মাটি ফেলে ব্যবস্থা নিয়েছি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) রাজীব কুমার সরকার বলেন, খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :