দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ। সকাল থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়া আর বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ার কারণে এ উপজেলায় সব থেকে বেশি কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষজন। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে।
দিনাজপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বুধবার (১ জানুয়ারি) সকাল ৬ টায় দিনাজপুর জেলায় ১১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এতে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৪ শতাংশ এবং বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ কিলোমিটার। তবে সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী ক্ষেতমজুর রেজিনা টুডু (৩২) ও সোনালী সরেন (৪০) বলেন, দিনে সূর্য উঠলেও ঠান্ডা বাতাসের কারণে খেতে কাজ করা কষ্টকর হয়। বেশিক্ষণ ক্ষেতে কাজ করলে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে অবশ হয়ে যাচ্ছে, এজন্য বেশিক্ষণ জমিতে কাজ করা যাচ্ছে না। সন্ধ্যা থেকে দুপুর পর্যন্ত কনকনে ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের কৃষিশ্রমিক আব্দুর রহমান বলেন, জমিতে চারা তৈরির জন্য ধান ছিটানোর কাজ করছেন। কিন্তু এত ঠান্ডা যে, কাদা পানিতে পা রাখা যাচ্ছে না। ঠান্ডার কারণে ঠিকমত কাজ করতে পারছি না।
অটোরিকশাচালক সামসুর রহমান বলেন, সকালে হেডলাইট জ্বালিয়ে অটো চালাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় যাত্রী কম হয়। রুটিরুজির জন্য কনকনে ঠান্ডা ও শীতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছেন সড়কে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গ্রামে থাকা ছিন্নমূল, অসহায় ও দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা নাকাল। অনেকেই খড়-কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ঘন কুয়াশার কারণে রাস্তার অদূরে কিছুই দেখা যায় না। তাই দুর্ঘটনা এড়াতে সড়ক, মহাসড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির কারণে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার প্রকোপ বেশি। কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। শিশুদের যাতে শীত না লাগে এ ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. সানাউল্লাহ বলেন, উপজেলার দুস্থ শীতার্তদের জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম পর্যায়ে ২০০ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ৮৭০ টি কম্বল এবং নগদ ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। নগদ ৩ লাখ টাকা দিয়ে আরো ৯১০ টি কম্বল কেনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই কম্বলগুলো উপজেলার এতিমখানাসহ, ছিন্নমূল মানুষ ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :