মেহেরপুরের গাংনীতে উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোর কারনে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের নিস্ক্রিয় ভুমিকার কারণে বেপরোয়া ভাবে যত্রতত্র মাইক বাজানো হচ্ছে। বারবার গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করা হলেও তিনি গড়িমসি করছেন। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইক বাজিয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের কর্মসূচি, ভোগ্যপণ্য, ডাক্তারের সন্ধান, গরু-ছাগল হারানো সহ নানা প্রচারণা চালানো হয়। ফলে সড়কের পাশে থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাসপাতাল, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমার দাপ্তরিক কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে।
মাইকের আওয়াজে শিক্ষার্থীরা রাতের বেলায় যেমন পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারে না তেমনি রোগী ও তার স্বজনরা মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের অবহেলা আর নিস্ক্রিতার কারনে বেপরোয়া ভাবে যত্রতত্র মাইকের ব্যবহার বাড়ছে। এতে করে শ্রবণ শক্তি হারানোর পাশাপাশি নানা সমস্যায় পড়ছে এলাকাবাসী।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শব্দ দূষণে শরীরের প্রথম আক্রান্ত হয় কান এবং শ্রবণশক্তি, যারা অতিরিক্ত শব্দের মধ্যে থাকেন তারা ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি হারাতে থাকেন। শব্দদূষণের কারণে শিশু মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হতে পারে। অতিরিক্ত শব্দে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক অসুখের ঝুঁকি বাড়ায় এছাড়া মানসিক ক্লান্তি উচ্চ রক্তচাপ, স্নায়ুবিক সমস্যা, অমনোযোগিতা সৃষ্টি এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস করে।
গাংনী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সকাল থেকেই মাইকে নানা প্রচার প্রচারনা শুরু। মাইকের শব্দে কান ঝালাপালা অবস্থা। সঙ্গে আছে গাড়ির হর্নের শব্দ দূষণ। এই শব্দ দূষনের যন্ত্রণা থেকে আমরা মুক্তি চাই।
গাংনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এখন পরীক্ষা চলছে। দিন রাত্রী সমানতালে মাইক বাজানো হচ্ছে। মাইকের আওয়াজে পড়ায় মনোযোগ দেওয়া যায় না।
গাংনী মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ সাজ্জাদ রাজা বলেন, উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোর ফলে ক্লাসে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। একারনে পাঠদান ব্যহত হয়। তাই উচ্চ শব্দে মাইক ব্যবহার বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেন তিনি।
আইনজীবিরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর ক্ষমতাবলে শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ এবং বিধিমালায় ‘নীরব’ ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প পাঁচটি এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
বিধিমালার আওতায় নীরব এলাকায় দিনে (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫০ ডেসিবেল ও রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪০ ডেসিবলের বেশি আওয়াজ করা যাবে না। একইভাবে আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ও রাতে ৫০ ডেসিবেল, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ও রাতে ৭০ ডেসিবেল শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অথচ কর্তৃপক্ষ দেখভাল না করার কারনে যত্রতত্র মাইক বাজানো হচ্ছে।
কয়েকজন মাইক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ক্রেতা ও শ্রতাদেরকে আকৃষ্ট করতে উচ্চ শব্দে মাইক বাজাতে হয়। সবাই তো মাইক বাজাচ্ছে, তাই আমরাও বাজাচ্ছি। মাইক বাজাতে প্রশাসনের অনুমতি নেয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাইক বাজাতে অনুমতি নেওয়া লাগে নাকি। বাজারে যেভাবে মাইক বাজানো হয় ঠিক সেভাবেই প্রশাসনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তো মাইক বাজানো হয়।
এবিষয়ে কথা বলতে পরিবেশ অধিদপ্তর মেহেরপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোজাফফর হোসেন এর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে তিনি ফোন (রিসিভ করেননি) ধরেননি।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আবারো বলা হবে। জনসচেতনার জন্য এবিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জন্য আহবান জানান তিনি।
উচ্চশব্দে মাইক ব্যবহার বন্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন বিষয়টা দেখছি।
আপনার মতামত লিখুন :