চুয়াডাঙ্গায় বেরিয়ে আসছে সমাধান ফাউন্ডেশনের প্রতারণার নানা কৌশল। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গভীর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তাকে। জেলা সমবায় অফিসার বলছেন, এখন পর্যন্ত সমাধানের কাগজপত্র ঠিক মনে হয়নি। ১০ তারিখের মধ্যে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে জেলা প্রশাসকের কাছে। তবে অনেকটা গোপনে পরিচালিত এই সমাধান ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ বেড়েই চলেছে। প্রশাসনকে ডোনারদের অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ডোনাররা ফেরত পায়নি টাকা। আবার জেলা প্রশাসক তদন্তের নির্দেশ দিলেও মাঠ পর্যায়ে কর্মী ও ডোনারদের সমাধান ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা বোঝাচ্ছেন জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার অনুমতি দিয়েছেন। প্রতারণার নতুন ছক ও কৌশল আটছেন সমাধান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান।
সচেতন মহল বলছে, তদন্ত করতে যত বেশি সময় নেয়া হবে, তত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের নাকের ডগা থেকে অর্থ নিয়ে লোপাট হলে সেটা হবে হাস্যরসের।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সমাধান ফাউন্ডেশন এর ট্রেড লাইসেন্স মাত্র ২০ দিন আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে নেয়া, একক মালিকানায়। অথচ বছরের পর বছর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ট্রেড লাইসেন্স যা করা হয়েছে তাতে শুধুমাত্র তারা ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে তাও আবার সরবরাহ ব্যবসা, ব্যক্তিগতভাবে। প্রতিষ্ঠানের নাম "সমাধান গ্রুপ", চালানো হচ্ছে "সমাধান ফাউন্ডেশন" এর নামে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সমাজসেবা অফিস তাদের এ কাজের ব্যাপারে কিছুই জানেনা। একক মালিকানার প্রতিষ্ঠান হিসেবে ট্রেড লাইসেন্স এ ব্যবসার ধরণ বা উদ্দেশ্য উল্লেখ বাধ্যতামূলক। অথচ সমাধান ফাউন্ডেশন যা উল্লেখ করেছে তা অগ্রহণযোগ্য ও ভুল উপস্থাপন। নিজেদেরকে কখনো চেইন কোম্পানি, কখনো এনজিও হিসেবে পরিচয় দিলেও, জাতীয় এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন তারা নেয়নি। এতদিনেও তাদের কোনো ভিত্তিমূলক কার্যক্রম নেই, সমাধান ফাউন্ডেশন চলছে ডেসটিনির মত এমএলএম/পুঞ্জি/পিরামিড স্কিমে যা দেশের আইনের পরিপন্থি। (উল্লেখ্য, এ স্কিমে দ্রব্য বা সেবা ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে আয় না করে, নতুনভাবে নিয়োগ দিয়ে অর্থ উপার্জনের পর সেই অর্থ পুরানো কর্মীদের মাঝে বেতন হিসেবে বন্টন করা হয়)।
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে মানুষকে আশা ও প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ নেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে জানুয়ারি থেকে তাদের সুপারশপ, কৃষিখাত সহ বিভিন্ন কার্যকারিতা শুরু হবে। সমাধান ফাউন্ডেশন নামে বাংলাদেশে আরো দুইটি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যাদের কর্মকান্ড এবং লোগো কোনোটিই চুয়াডাঙ্গার সমাধান ফাউন্ডেশন এর সাথে মেলে না। চুয়াডাঙ্গার মধ্যে মাত্র বিগত কয়েকমাসে তারা অফিসিয়াল তালিকাভুক্ত ২৪৪ জন মানুষের কাছে থেকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা নিয়েছে, যা মোট হিসেবে ৭৪ লক্ষ ২৪ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু সবমিলে চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কমপক্ষে এর থেকে অনেক গুণ বেশি নারী-পুরুষ তাদেরকে ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা করে দিয়েছে।
সম্পূর্ণ বেআইনি ও প্রতারণা, সাথে আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে সমাধান ফাউন্ডেশন। সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে, প্রশাসনের নজরের সামনে আসার পরও কেন তাদেরকে সময় দেয়া হচ্ছে। কোনো কাগজপত্র না থাকলেও এ ধরনের কাজ করছে, আবার তাদের কিছু কাজ দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী। তারপরও তাদেরকে কাগজপত্র দেখাবার সময় দেবার অর্থ কি? আর আরেকটি মহল বলছে, তারা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নাম ভাঙিয়ে কার্যক্রম শুরু করছেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার অনুমতি দিয়েছেন, এমন গুজবই ছড়ানো হচ্ছে।
তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক বলছেন, সমাধান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ আছে। তদন্ত করতে জেলা সমবায় অফিসারকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, সমাধান ফাউন্ডেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন এসছিলেন। তাদের কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ আছে। যে কাজ করছেন, তার সাথে তাদের কাগজ-পত্রের কোনো মিল নেই। আমি জেলা সমবায় অফিসারকে তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছি।
জেলা সমবায় অফিসার কাজী বাবুল হোসেন বলেন, সমাধান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রমের সাথে এখনো পর্যন্ত তাদের দেখানো কাগজের মিল পাইনি। এ ধরনের কাজ করছিলেন, সমবায় অফিসার বা সমাজসেবা অফিসার কিংবা জেলা প্রশাসক মহোদয়ও বিষয়টি জানতেন না। জেলা প্রশাসক মহোদয় তদন্ত করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আগামী ১০ তারিখের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবো।
আপনার মতামত লিখুন :