সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুরোনো মোটরসাইকেল। বিক্রেতারা তাদের মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, ক্রেতারা তা ঘুরে ঘুরে দেখছেন। পছন্দ হলেই করছেন দর-কষাকষি। এটি কোন মোটরসাইকেলের শো-রুম নয়, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা রেলস্টেশনের সন্নিকটে পৌর বাস টার্মিনালের পুরোনো মোটরসাইকেল হাট। যা বসে সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার। এ হাটে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১ থেকে দেড় কোটি টাকার মোটরসাইকেল কেনাবেচা হয়। এখানে ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট জানা গেছে, ২০১৩ সালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বাস টার্মিনালে গড়ে ওঠে পুরাতন মোটরসাইকেলের হাট। হাটটি ইজারা দেয় আলমডাঙ্গা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এ বছর ভ্যাটসহ ৯১ লাখ ২০ হাজার টাকায় হাটটির ইজারা নেন আলমডাঙ্গা উপজেলার কুলপালা গ্রামের আলমগীর কবীর শিপলু নামে এক ব্যবসায়ী। প্রতি সপ্তাহের শুক্রবার ক্রেতা ও বিক্রেতাদের উপ¯ি’তিতে জমে উঠে পুরোনো মোটরসাইকেলের বিশাল এই হাট। কেনাবেচা চলে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা, বিক্রেতা ও দর্শনার্থীরা এসে ভিড় জমায় এই হাটে। এটিই হলো দেশের অন্যতম বৃহৎ পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট।
চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা এখানে আসেন তাদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল বিক্রি করতে এবং পছন্দের মোটরসাইকেলটি ক্রয় করার জন্য। প্রায় এক যুগ থেকে চলে আসা এ হাটে কখনো কোনো বড় ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এ কারণে এ হাট আকৃষ্ট করেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের।
সরেজমিনে হাট ঘুরে দেখা গেছে, এ হাটে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের, মডেলের ৫০ থেকে ১৫০ সিসির ব্যবহৃত মোটরসাইকেল পাওয়া যায়। হাটকে কেন্দ্র করে পুরোনো মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয় পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। এসব ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মোটরসাইকেল ক্রয় করে এই হাটে নিয়ে আসেন বিক্রি করার জন্য। অনেকে তাদের নিজের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি বিক্রয় করার জন্য অথবা বিক্রি করে অন্য মোটরসাইকেল কেনার উদ্দেশ্য নিয়েও আসেন এখানে।
হাট কর্র্তৃৃপক্ষ জানায়, প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১ হাজার থেকে ১১শ টি মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০টি মোটরসাইকেল বিক্রয় হয়। যার মূল্য ১ থেকে দেড় কোটি টাকা। সাধারণ ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়াও অন্তত ২০০ জন স্থায়ী ব্যাপারী এই হাটে নিয়মিত আসেন।
জেলার দামুড়হুদা উপজেলার ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ বলেন, আমি দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ পুরোনো মোটরসাইকেলের ব্যবসা করি। আমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। এত বড় পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট বাংলাদেশের কোথাও আমি দেখিনি। প্রতি হাটে আমি ৮-১০ টা মোটরসাইকেল নিয়ে আসি। এর মধ্যে ৫-৬ টা মোটরসাইকেল বিক্রি করতে পারি।
আলমডাঙ্গার স্থানীয় ব্যবসায়ী শিমুল হোসেন বলেন, এই হাটে ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিরাপদ। এখান থেকে মোটরসাইকেল কিনতে কোন ধরণের ঝুঁকি নেই। যে কোন ধরণের সমস্যা হাট কর্তৃপক্ষ তাদের নিজের দায়িত্বে সমাধান করে দেন। হাট কর্তৃপক্ষ মোটরসাইকেলের কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকেন।
পাবনা থেকে আসা ক্রেতা সেলিম রেজা জানান, আমি এই হাট থেকে আজ একটি বাজাজ পালসার মোটরসাইকেল কিনলাম। এর আগেও একদিন এসে দেখে গেছি। আজকে এসে পছন্দ হলো দাম দর ঠিক থাকায় কিনে নিলাম। হাট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিক্রয় রশিদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বুঝে নিয়েছি।
মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কবসা গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা আশকার আলী বলেন, আমি কিছুদিন আগে একটি মোটরসাইকেল ক্রয় করেছি। আজকে গাড়ির বাকি কাগজপত্র নেয়ার তারিখ ছিল। সেটা নিতে এসেছি এবং সাথে আরও কিছু বন্ধুরা এসেছে মোটরসাইকেল কেনার জন্য। এখানে অনেক ভালো ভালো মোটরসাইকেল তুলামূলক কম দামে পাওয়া যায়।
পুরোনো এ মোটরসাইকেল হাটের ইজাদার আলমগীর কবীর শিপলু বলেন, এই হাটে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার থেকে ১১শ মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে অন্তত ১০০ থেকে দেড়শ মোটরসাইকেল বিক্রি হয়ে যায়। ক্রেতাদের সুবিধা হ”েছ তারা তুলনামূলক কম দামে দেখে শুনে মোটরসাইকেল কিনতে পারেন। ক্রেতারা এবং বিক্রেতারা যাতে নিরাপদে ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন তার সব ব্যবস্থা আমরা করে থাকি। আমরা প্রতি মোটরসাইকেল থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কাছ থেকে ৫০০-৭০০ টাকা খাজনা আদায় করে থাকি। এতে ক্রেতা বিক্রেতাদের কোন সংশয় থাকে না।
চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক বলেন, জেলার বৃহত্তম উপজেলা আলমডাঙ্গা। প্রায় এক যুগ ধরে এখানে পুরোনো মোটরসাইকেলের হাট বসে। আমার জানামতে এখানে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ হাজার থেকে ১১শ মোটরসাইকেল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে আনা হয়। তবে আর দশটা হাটের চেয়ে এটি একেবারেই আলাদা। এখানে শুধু পুরোনো মোটরসাইকেল কেনাবেচা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :