আম, বরই, চালতা, কতবেল, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচসহ ৩৩ পদের আচার বিক্রি করেন আবদুর রহমান (৬৫)। গত ২০ বছর ধরে বাঞ্ছারামপুর পৌর শহরের বিভিন্ন মার্কেটের সামনে আচার বিক্রি করেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন ওরশ, মেলা, সমাবেশসহ অনুষ্ঠানে তিনি সহ ৩ ছেলে ৩টি স্টল নিয়ে আচার বিকিকিনি করেন। তার আচারের নাম দিয়েছেন আ. রহমানের পঞ্চরসের আচার।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন বলে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সব শ্রেণির মানুষই তাঁর আচারের ক্রেতা। সুনামের কারণে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে তাঁর কাছ থেকে আচার কেনেন।
রহমান মিয়ার কাছে আমের ফলি, আমের তেলের আচার, আমের মোরব্বা, টক-ঝাল বরই, টক-ঝাল জলপাই, চালতার মোরব্বা, চালতার ঝুরি, তেঁতুল, কতবেল, আমড়ার টক-ঝাল, আলুবোখারা, কাঁচা খেজুর, রসুন, কাঁচা মরিচ, নাগা মরিচ, সাতকরার আচারসহ ৩৩ পদের আচার আছে। তিনি সর্বনিম্ন ২০ টাকার আচার বিক্রি করেন। বয়ামে আচারের ধরন অনুযায়ী ২৫০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
রহমান মিয়া বলেন, আচারে ধুলাবালু ও মাছি যাতে না বসতে পারে, এ কারণে কাচের ভেতরে আচার রাখেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কারণে সবাই তাঁর কাছ থেকে আচার কিনে খান। নিজেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন, পরিপাটি হয়ে থাকেন।
মেয়েকে নিয়ে আচার খেতে এসেছেন পৌর এলাকার শহরের বড়বাড়ি এলাকার গোলাপ শাহ নামে যুবক। তিনি বলেন, এই আচারের স্বাদ অন্য রকম। ছোটবেলা থেকে খাচ্ছেন তিনি। বিক্রেতা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখেন বলে খেতে গিয়ে কোনো অস্বস্তি হয় না। তাই পরিবারের সবার জন্য ৪'শ টাকার ১২ রকমের আচার কিনেছেন তিনি।
আচার তৈরিতে রহমান মিয়াকে সহযোগিতা করেন তাঁর স্ত্রী। তিনি আচার তৈরির উপকরণগুলো কাটাকাটি করে দেন। মসলাসহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে আচার তৈরি করেন রহমানসহ তার ৩ ছেলে। প্রতিদিন তিনি ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকার আচার বিক্রি করেন বলে জানালেন। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সে বিক্রি ১০ গুণ বেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে তার সমমিলিয়ে মাসে আয় থাকে প্রায় লাখ টাকার মতো। বয়সের ভাড়ে বিকিকিনিতে সর্বক্ষণ তার ছেলেরা সহায়তা করতে দেখা গেছে।
আচার বিক্রির শুরুর প্রসঙ্গে রহমান বলেন, ২০০৪ বিয়ের পর নারায়ণগঞ্জে স্ত্রীর ও সন্তানদের নিয়ে কষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটছিলো তার। পরে ২ হাজার টাকা সুদে ধার নিয়ে আচার বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন।
১ মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ৩ ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে আচারের ব্যবসা থেকে। এখন তার স্বপ্ন বাঞ্ছারামপুরে একটুকরো জমি কিনে বাড়ি তৈরি করা।
এখন এই দম্পতি বাঞ্ছারামপুর শহরের মাষ্টার পাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে তার। এখন ৩ ছেলেই তার সাথে আচার ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তারা একেক দিন একেক প্রোগ্রামে আচার নিয়ে ছুটে যান।
এই যে তাঁর আচারের এত সুনাম, সেটা কীভাবে সম্ভব হলো, জানতে চাইলে আবদুল রহমান বলেন, সবকিছু তিনি ও তাঁর স্ত্রী সাহেরা খাতুন নিজ হাতে যত্ন নিয়ে তৈরি করেন। তাদের সহায়তা করেন ৩ ছেলের বৌ।
ভালো আচার তৈরি করতে হলে দুই হাতের সঙ্গে মনটাও পরিষ্কার লাগবে। তাহলেই ভালো আচার হবে জানান রহমান মিয়ার স্ত্রী সাহেরা।
আপনার মতামত লিখুন :