দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধন হয় ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর। একই সাথে সেদিন দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনেরও উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের ৪৮তম জেলা হিসেবে যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার। যুক্ত হওয়ার ১ বছর পূর্ণ হলো সোমবার ( ১১ নভেম্বর ২০২৪ ইং)।
সামনে এক ঝিনুক আর ভেতরে মুক্তা। এর পেছনেই দৃষ্টিনন্দন এক রেলস্টেশন। দেখলেই আটকে যাবে চোখ। কক্সবাজারে নির্মিত চোখ জুড়ানো অসাধারণ নির্মাণশৈলী আর কারুকাজের এই আইকনিক রেলস্টেশন। যা নির্মিত হয় ২৯ একর জমির ওপর। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা।
প্রথম বছরেই চমক দেখালেন কক্সবাজার রেল স্টেশন, এ বছরই আয় হয়েছে ৩৭ কোটি টাকা। যাত্রী চাহিদার তুঙ্গে থাকায় আয়ের শীর্ষে রয়েছে কক্সবাজার এক্সপ্রেস।
ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝামেলামুক্ত ও আরামদায়ক হওয়ায় ভ্রমণ পিপাসুদের পছন্দের তালিকায় অন্যতম একটি বাহন হচ্ছে ট্রেন ভ্রমণ। পর্যটকেরা বলছেন, ট্রেনে কক্সবাজার আসা স্বস্তিদায়ক।
উদ্বোধনের ১ বছর হলেও পূর্ণাঙ্গ হয়নি কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন। চলছে নির্মাণ কাজ। ১ বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না ক্রোভ প্রকাশ করছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত আইকনিক রেল স্টেশনে ধরা পড়ছে নানা ত্রুটি। বৃষ্টি পড়লেই স্টেশনের ভেতরে বেশ কয়েকটি অংশে পড়ছে বৃষ্টির পানি। আর আইকনিক স্টেশনের ছাদের পানিতে সয়লাব হচ্ছে প্লাটফর্ম। যার কারণে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে যাত্রীরা। এছাড়াও নেই পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা। এ বিষয়ে সহকারী স্টেশন মাস্টার মেহেদী হাসান জনবল সংকটের কথা বলেন।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও মার্কেটিং বিভাগে হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রেন পরিচালনা করতে রেলের পরিচালন ব্যয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। আর ঢাকা-কক্সবাজার রুটে প্রতিটি ট্রিপে আয় হয় গড়ে ৭-৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রতি ট্রিপে ২-৩ লাখ টাকা মুনাফা হয়।
বর্তমানে এ রেলপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেস নামের দুটি ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ঈদ স্পেশাল নামের আরেকটি ট্রেন চলছে। এর বাইরে ঈদ, পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবে বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করছে রেলওয়ে।
স্থানীয় সরওয়ারের অভিমত রেল প্রকল্পের মাধ্যমে কক্সবাজারের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন আসবে।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মেহেদী হাসান বলেন, ঢাকা কক্সবাজার রোডে যাত্রী চাহিদা অনেক বেশি। অতিদ্রুত পূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন করবার চেষ্টা চলছে।
১০০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে কাটা হয়েছে পাঁচ লাখের বেশি গাছ। পুরো রেলপথটি নির্মাণে ৬৭ কিলোমিটার বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। পাহাড় কাটা হয়েছে প্রায় ১৩ কিলোমিটার। রেলপথটি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিবেশের বড় ধরনের ক্ষতি করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ কর্মী ইরফানুল হাসান বলছেন হাতি পারাপারে জন্য যে ওভার পাস করা হয়েছে, তা তো হাতি চিনেনা, হাতি চলাচলের রাস্তা খুবই কম হয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ি আব্দুর রহমান বলেন কক্সবাজার আসার পর্যটকদের প্রধান ভরসা ছিলো সড়কপথ। আকাশপথে আসা পর্যটকের সংখ্যা সীমিত। রেল চালু হওয়ায় পর্যটনে অপার সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে বলে মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়িরা।
তথ্য বলছে প্রথম বছরেরই রেল লাইনে কাটা পড়ে মারা গেছেন ১৫ জনের অধিক। জনবল বাড়ানো হোক পাশাপাশি অপূর্ণাঙ্গ কাজ সম্পন্ন হোক সেই প্রত্যাশা সকলের।
আপনার মতামত লিখুন :