চাঁপাইনবাবগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে দায়ের করা হয়েছে মামলা। অথচ মামলার বাদি জানেন না কারা হয়েছে আসামী। নাম ব্যবহার করলেও এবিষয়ে কিছুই জানেন না বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে মামলার প্রতিবাদে ও ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে তারা।
বুধবার (০৬ নভেম্বর) দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনার চত্বরে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মামলাটির নেপথ্যে রয়েছেন সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য মো. ফায়েজ উদ্দিন কালু ওরফে কালু মেম্বার। তার মদদেই স্থানীয়ভাবে তার সাথে বিরোধ রয়েছে এমন কয়েকজনকে করা হয়েছে মামলার আসামী। মামলায় সিংহভাগ আসামীর সাথেই রয়েছে তার বিরোধ। এছাড়াও সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের করেছেন আসামী।
জানা যায়, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ওয়ার্ড সদস্য মো. ফায়েজ উদ্দিন কালু ওরফে কালু মেম্বার। গত ০৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারোঘরিয়া কালিতলা এলাকায় বাবুল কাঁসারির শিশুদের খেলনার পাইকারী দোকানে আগুন দেয়া হয়। অগ্নিকাণ্ডের নেতৃত্ব দেন কালু মেম্বার ও মামলার বাদি ইউসুফ আলী। অভিযোগ উঠেছে, ব্যক্তিগত শত্রুতার বিরোধেই দোকানে আগুন দেয় ওয়ার্ড সদস্য কালু মেম্বার।
মামলায় আসামী করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদার বাবুল কাঁসারিকেও। এমনকি এই মামলায় বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অন্যতম চেয়ারম্যান প্রার্থী ওয়ার্ড সদস্য মো. ফায়েজ উদ্দিন কালু ওরফে কালু মেম্বার। আসামীর তালিকাতেও প্রভাব পড়ছে। আসামী করা হয়েছে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সাবেক ওয়ার্ড সদস্য মো. আলামিন এবং লক্ষীপুর যুব সংঘ ক্লাবের সভাপতি ও মাস্টারপাড়া স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. সাদরুল ইসলাম সানিকে। বাদ পড়েননি বর্তমান চেয়ারম্যান হারুন অর রশীদও।
এবিষয়ে মামলার বাদি বারোঘরিয়া কালিতলা গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ আলীকে আসামীদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সব আসামীদের আমি চিনি না। বড় ভাইদের পরামর্শে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তিকে মামলার আসামী করা হয়েছে।
এবিষয়ে লক্ষীপুর যুব সংঘ ক্লাবের সভাপতি ও মাস্টারপাড়া স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের সভাপতি বিশিষ্ট সমাজসেবক মো. সাদরুল ইসলাম সানি বলেন, একজন ব্যবসায়ী হিসেবেই আমার পরিচতি। তবে দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবামূলক বিভিন্ন কাজ করে থাকি, এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার মনস্থির করি। এটি জানতে পেরেই আমাকেও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের মামলা করা হয়েছে। অথচ আমি ঘটনার দিন রাজশাহীতে অবস্থান করছিলাম।
তিনি আরও বলেন, শুধু আমাকে নয়, যাদের সাথে কালু মেম্বারের বিরোধ রয়েছে, তাদেরকেই আসামী করে হয়রানি করা হচ্ছে। জানতে পেরেছি, স্থানীয়ভাবে বিরোধ রয়েছে এবং চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এমন কয়েকজনকে হয়রানী করতে আরও কয়েকটি মামলার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন কালু মেম্বার। আমি চাই, ঘটনাটির সুষ্ঠ তদন্ত করে কালু মেম্বারসহ দোষীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হোক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেন, গত ০১ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে সাবেক এমপি, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ২০-২৫ জনকে আসামি করে একটি বিস্ফোরক মামলা হয় সদর মডেল থানায়। অথচ এবিষয়ে কিছুই জানেন না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তরা। আমাদেরকে না জানিয়ে মামলায় অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করতেই আমাদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা আরও বলেন, মামলাটির বাদী ইউসুফ আলী ও সাক্ষীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নন, তারা ব্যক্তিগতভাবে মামলাটি করেছেন।
জানা গেছে, মামলাটি থেকে অব্যাহতি দেয়ার নাম করে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুঠোফোনে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করার পাশাপাশি ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচারের দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করেন, বারোঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ড সদস্য মো. ফায়েজ উদ্দিন কালু ওরফে কালু মেম্বার। মুঠোফোনে তিনি জানান, এই মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কাদেরকে আসামী করা হয়েছে, তা জানা নেই।
প্রসঙ্গত, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে হওয়া মামলায় গত মঙ্গলবার দুপুরে ১১ আসামী আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তা না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিন আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনে আপত্তি নাই এমন আবেদন করায় মামলার বাদী ইউসুফ আলীকেও আটক রাখার নির্দেশ দেন আদালত। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
আপনার মতামত লিখুন :