ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে পরিবারের অমতে বিয়ের জেরে এক বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের সামনেই প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের উৎসব চলছে। নারীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টাসহ বিভিন্ন মানুষকে মারধর করা হচ্ছে। নিরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ। আর মামলার ভয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রাম ছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার।
উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের শাহিনুর বেগম ও একই গ্রামের সাইফুল মিয়া পরিবারের অমতে পালিয়ে বিয়ে করেন। পরিবারের চাপে সাইফুলকে তালাক দেয় শাহিনুর। এঘটনায় গত সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষের সাইফুলের দাদা বৃদ্ধ সিদ্দিক মিয়া মারা যান। এঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা রজু করা হয়।
শাহিনুর একই গ্রামের ৩ নং ওয়ার্ডের সালাম মেম্বারের মেয়ে এবং সাইফুল মিয়া নিহত সিদ্দিক মিয়ার নাতি।
৬ নভেম্বর সরেজমিন সোনাতলা গ্রামে গিয়ে মেলে লুটপাটের দৃশ্য। বেলা ১১টার দিকে সালাম মেম্বারের বাড়িতে যেতেই দেখা যায় ১২ থেকে ১৮ বয়সী প্রায় অর্ধশতাধিক ছেলে-মেয়ে ও নারী পুরুষ ২৯টি ঘর থেকে দরজা ভেঙ্গে গুর-ছাগল, আসবাবাপত্র, টাকা-পয়সা,ঘরের টিন এমনকি থালাবাসেন ও লেপতোশকসহ কবরে মৃতদেহ নেওয়ার খাটিয়াও নিয়ে যাচ্ছে।
লুটপাটে অংশ নেওয়া স্কুল শিক্ষার্থী মাসুম মিয়া বলেন, আব্বা কইছে আজকা ইসকুলে যাওন লাগতনা। সালাম মেম্বারের বাড়িত যা আছে সব নিয়া আইতে অইব। পরে মেম্বারের বাড়িসহ আরো ১০-১৫ টা বাড়ি থেইক্যা ফ্রিজ, টিভি, চাউল, হাড়ি-পাতিল ও গরু-ছাগল নিছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মোছাম্মত ছালেহা বলেন, ‘পুলিশ কোন কাজই করতেছে না। তাদের সামনে এতগুলা বাড়ি-ঘর ভাঙছে। লুটপাট করতাছে কিন্তু হেরা চাইয়া চাইয়া দেখে। পুলিশ কিছু কইলে উল্টা তাদের দিকে র্বরম লইয়া আসে সিদ্দিক মিয়ার পুলারা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, পুলিশের সামনে লুটপাট হচ্ছে। আমাদের বাড়িতে থাকা নারীদের মারধর ও শ্লীলতাহানী করছে কিন্তু পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখছেন। তারা এ নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। তবে পুলিশ বলছেন, আমাদের কিছুই করার নেই। আমরা অসহায়। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় আমাদেরও মারতে আসে।
আয়েমা বেগম বলেন, আমি ৬০ বছরে মহিলা। কিন্তু আমারে এরা ধান ক্ষেতে নিয়া গিয়া বেইজ্জতি করতে চায়। পুলিশরে কইছি স্যার আমার ইজ্জত বাঁচান। কিন্তু পুলিশের সামনে সব হইলেও কোন উপায় পাইছিনা। আমি এহন কই যামু।
যাদের বাড়িতে লুটপাট করা হয় তাদের নাম হলো- অহিদ মিয়া, খলিল মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, আলমগীল মিয়া, রহিম মিয়া, সুবজ মিয়া, মিজান মিয়া, সালাম মিয়া, সেলিম মিয়া, জিলাল মিয়া, জুহুর মিয়া, জিয়াউর রহমান, হামিদ মিয়া, মজিদ মিয়া, হামিদ মিয়া, তালেম মিয়া, আনোয়ার মিয়া, জামির মিয়া, জয়নাল মিয়া, আমিনুল মিয়া, মিজানুল মিয়া, এনায়েথ উল্লাহ, কবির মিয়া, নুরু মিয়া, আব্দুস মিয়া, কাশেম মিয়া, জামাল মিয়া ও মিজানুর রহমানের ঘর থেকে নগদ টাকা, গবাদি পশু ও আসবাবপত্র নিয়ে যায়।
লুটপাটে বিষয়টি স্বীকার করে, চাতলপাড় পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জাহির হোসেন বলেন, আমরা সাতজন পুলিশ লুটপাট ঠেকাতে রাতদিন কাজ করছি। কিন্তু আপন তো দেখছেনই, চোখের সামনেই কিছু ঘটনা ঘটছে। আপনারাতো বুঝেনই- একটি হত্যাকান্ড ঘটলে কিছু ঘটনাতো ঘটবেই। তার পরও আমরা চেষ্ঠা করছি লুটপাট ঠেকাতে। লুট হচ্ছে কিছু বললে বা বাধা দিলে আমাদের দিকে দেশিয় অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে।
নিহত সিদ্দিক মিয়ার ছেলে আলী আজগর বলেন, লুটপাটে বাধা দিলে পুলিশসহ কেউ নিরাপদ থাকবেনা। যদি আমার বাবারে ফিত এনে দিতে পারেন তাইলে আর কোন লুটপাট হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :