বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, যারা ক্ষমতা পিপাসু, যাদের কাছে জীবনের চেয়ে ক্ষমতার মূল্য বেশি, টাকার মূল্য বেশি, তাদেরকে এখন থেকে আমাদেরকে পরিত্যাগ করতে হবে। আমাদের দলকানা হওয়া যাবে না। যে যেই দলেরই হোক না কেন, কেউ যদি আপনার কথা শুনে, আপনার কথা বলে, আপনার জন্য কাজ করে এবং আপনার কাছে জবাবদিহী করার প্রস্তুত থাকে। সে যেই হোক না কেন, আপনি তাকে প্রতিনিধি হিসেবে বেছে নিবেন। দলকানা হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, আমরা ইয়াং জেনারেশন এই জায়গায় যদি সচেতন না হই, তাহলে আর কারা হবে। এ জন্য সবাই সচেতন হতে হবে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে তেঁতুলিয়ার কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম বলেন, তোমরা যারা লেখাপড়া করছো, তোমাদের সবাইকে স্বপ্ন দেখতে হবে দেশের শীর্ষ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এজন্য ভালো ফলাফলের জন্য মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে হবে। দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে হলে মনোযোগ দিয়ে এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো করতে হবে। আর এ সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের স্মাটফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। এ জন্য শুধু যোগাযোগযোগের জন্য বাটন ফোন ব্যবহার করা যেতে পারে। আমি নিজেও অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে এনড্রয়েড ফোন নিয়েছি।
সারজিস আলম আরও বলেন, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে, এখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কী এমন কেউ আছো যারা আগামীতে পঞ্চগড় থেকে এমপি হবে? এমপি হবেন এমন ইচ্ছে আছে কার। যদি এমন হয় আমরা যাদের এমপি বা অন্য যা বলি তারা আমাদের কথা শুনে না, তাদেরকে আমরা কাছে পাই না। আমরা কিছু বললে, কিছু চাইলে পাই না। এখানে ধরা যেতে পারে সাদিয়া আগামী পনের-বিশ বছর পর আমাদের কাছে আসে, আমাদের কথা শুনে, জবাবদিহী করে। মানে আমরা যা চাই সেটা সে করে তাহলে আমরা সাদিয়াকে ভোট দিব।
অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের যারা আমরা প্রতিনিধি, আমরা যেন এখন থেকে কেউ দলকানা না হই। তাহলে এই অভ্যুত্থানের স্পীস, মানে কেউ এমন ফ্যাসিস্ট হয়ে যাবে, এক নায়ক হয়ে যাবে। যারা আমাদের জন্য কাজ করবে, আমরা তাদের জন্য কাজ করবো। তাই সবাইকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। আর মা-বাবাকে সম্মান করতে হবে।
এ সময় সমন্বয়ক সারজিস আলম ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের কথা স্মরণ করে বলেন, এ আন্দোলনে শহীদের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। আহতের সংখ্যা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার। আন্দোলনে অংশ নেওয়া কারো হাত নেই কারো পা নেই। এ সময় ১৮ বছর বয়সী হিমেল নামের এক শিক্ষার্থীর মাথায় গুলি লাগার চিত্র শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরেন সারজিস বলেন, এই হিমেলকে সাড়ে তিনশো গুলি করা হয়েছিল। কারণ সে আন্দোলনে সামনে ছিল। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ কথা তুলে ধরেন।
কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক বলেন, আমরা খুবই আনন্দিত যে আমাদের নারী শিক্ষাখ্যাত প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ এসেছেন। সারজিস আলম আমাদের পঞ্চগড়ের কৃতি সন্তান। সে এখান থেকে উঠে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। তাই সারজিসের মতো শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখতে হবে, পড়ালেখা করে দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করতে হবে।
মতবিনিময় শেষে শিক্ষার্থীরা সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহর অটোগ্রাফ ও সেলফি তুলতে উদগ্রীব হয়ে উঠে।
এ সময় সারজিস আলমের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক সফর সঙ্গী হাসনাত আব্দুল্লাহ উপস্থিত থেকে তিনিও শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ের সময় কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক,পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী ও মোকাদ্দেসুর রহমান সানসহ সমন্বয়কবৃন্দ ও অত্র কলেজের শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :