তেঁতুলিয়ার যে কয়েকটি নদীতে নুড়ি পাথর পাওয়া যায় তার মধ্যে অন্যতম ডাহুক নদী। গত কয়েক বছর আগে সমতল ভূমি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়ে কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক। অনেকেই বাধ্য হয়ে পরিবর্তন করেছেন পেশা। তবে শ্রমিকদের একটি বড় অংশকে টিকিয়ে রেখেছে ডাহুক নদীর নুড়ি পাথর। এই নদী থেকে নুড়ি পাথর উত্তোলন করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছেন উপজেলার কয়েক হাজার পাথর শ্রমিক। তবে হঠাৎ করে পাথর উত্তোলনে প্রশাসন কতৃক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বেকার হওয়ার পথে এই সাধারণ শ্রমিকরা।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের কালিতলা ডহুক সেতু সংলগ্ন এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে স্থানীয় পাথর উত্তোলন শ্রমিকরা। এসময় তারা সড়ক অবরোধ করে সড়কের উপর সমাবেশ করেন। এতে শালবাহান-হারাদিঘী আঞ্চলিক পাকা সড়কে আটকে থাকে বিভিন্ন যানবাহন।
এদিকে সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন, এক সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সমতল ভূমি থেকে সনাতন পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে পাথর উত্তোলন হতো। এতে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষের। এদিকে একটি কুচক্রী মহল অবৈধ ভাবে ডেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার কারণে বন্ধ হয়ে যায় পাথর উত্তোলন। এতে বেকার হয়ে পড়ে হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। পাথর উত্তোলন বন্ধ হলেও সরকার কর্তৃক শ্রমিকদের জন্য করা হয়নি কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা। তবে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে পরবর্তীতে নদীতে ডুবে ঢাঁকি কোদাল দিয়ে পাথর তোলে কোন রকম করে চালাচ্ছে সংসার। এভাবে কয়েক বছর ধরে ডাহুক নদীর বিভিন্ন স্থানে এসব গরীব শ্রমিকরা দল বেধে পাথর উত্তোলন করে আসছিলেন। হঠাং প্রশাসন কর্তৃক পাথর উত্তোলন নিষেধাজ্ঞা জারি করায় পাথর উত্তোলন করতে পারছে না শ্রমিকরা। ফলে বেকার হওয়ার পথে তারা। তাই তারা নদী থেকে পাথর উত্তোলনের দাবী জানান।
পাথর শ্রমিক নেতা হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা গরীব মানুষ। নদীতে যে পাথর ভেসে আসে সেই পাথর উত্তোলন করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে আমার না খেয়ে মরে যাবো।
একই কথা বলেন জরিফুল ইসলাম নামে আরেক পাথর শ্রমিক, আজকে আমরা সড়কে বসেছি কাজের জন্য। আমরা কাজ চাই। কাজ করে সংসার চালাতে চাই। আমরা পাথর উত্তোলন করতে চাই। প্রশাসন যেন আমাদের সহযোগিতা করেন।
শ্রমিক নেতা মস্তানসের বলেন, আমরা সরকারের সব নিয়মকানুন মেনেই পাথরের উত্তোলন করি। আমাদের এই পাথরে উত্তলোন যেন বন্ধ হয়ে যায় তাই একটি মহল কাজ করছে। আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো আমরা গরীব মানুষ যেভাবে নদীতে পাথর উত্তোলন করে আসছি। সেই ভাবে যেন করে যেতে পারি। সরকারের কাছে দাবি জানাবো আমাদের সাধারণ শ্রমিকদের মুখের আহার আপনারা এভাবে কেড়ে নিয়েন না।
তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও শ্রমিক নেতা মুক্তারুল হক বলেন, হাজার হাজার পাথর শ্রমিক সমতল ভূমিতে পাথরে উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু সমতল ভূমিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার তারা নদীতে পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। আর এই নদীরে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেলে আমার শ্রমিকরা না খেয়ে মারা যাবে। তাই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি শ্রমিকরা যেন আগের মত পাথর উত্তোলন করতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পাথর মহাল ব্যতিত কোথাও পাথর উত্তোলনে নিয়ম নেই। এছাড়া ডাহুক নদীর দুটি সেতু সংলগ্ন স্থানে পাথর উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেতু। এছাড়া সরকার কর্তৃক সারাদেশে পাথর উত্তোলনের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :