Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১

গাইবান্ধায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির ৫ তলা ভবন


দৈনিক পরিবার | শাহিন নুরী অক্টোবর ২৪, ২০২৪, ১২:৩৫ পিএম গাইবান্ধায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির ৫ তলা ভবন

গাইবান্ধায় তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারির শহরে ৫ তলা ভবন, এ যেন আংগুল ফুলে কলাগাছ। নাম  মিজানুর রহমান সবুজ। তিনি তৃতীয় শ্রেণির একজন কর্মচারী। অল্প বয়সী এই যুবকের গাইবান্ধা জেলা শহরে রয়েছে আধুনিক ডুপ্লেক্স ৫ তলা ভবন। শুধু কি শহরেই? না, গ্রামেও রয়েছে পাকা বাড়ি। খুব অল্প সময়ে বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক হওয়া এই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী সবুজ। পলিটেকনিক্যালের একজন ল্যাব সহকারী। যিনি সম্প্রতি গাইবান্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে সংযুক্তিতে বদলি নিয়ে এসেছেন। তৃতীয় শ্রেণির চাকরি করে অতিদ্রুত কোটিপতি বনে যাওয়ায় তিনি এখন গাইবান্ধায় সাধারণ মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। হাজারো মানুষের জিজ্ঞাসা, কি করে এত দ্রুত কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেলেন মিজানুর রহমান সবুজ।
সরেজমিন গিয়ে  দেখা যায়, গাইবান্ধার শহরের থানা পাড়ায় গাইবান্ধা সরকারি কলেজের দক্ষিণ পার্শ্বে গাইবান্ধা-নাকাইহাট সড়ক থেকে ২০০ মিটার ভিতরে সবুজের আধুনিক দুই ইউনিটের ৫ তলা কালারফুল ভবন। বাড়িটির ওপেন পার্ট সম্পূর্ণটাই টাইলস করা। জানালায় থাই, ওয়াইফাই, সিসি ক্যামেরায় আবৃত ওই এলাকার এটিই সব থেকে আধুনিক ডিজাইনের আকর্ষণীয় বাড়ি।
বাড়িটি পাঁচ শতাংশ যায়গার ওপর দন্ডায়মান। জমিসহ যার বর্তমান বাজার মূল্য কমপক্ষে ৪ কোটি টাকা। শুধু শহরেই নয়, সবুজের গ্রামের বাড়ি রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ডিব বাজার এলাকায়। সরেজমিনে সেখানেও দেখা যায়, পুকুরের উপর একতলা নতুন ভবন। আছে এসিও। যদিও সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। সবুজ পরিবারসহ শহরের বাড়িতেই থাকেন।
সবুজের বাবার নাম মৃত আমিনুল ইসলাম। সবুজের দুই বড় ভাই টিভির মেকার। কল মেকার হিসেবেই তাদেরকে স্থানীয়রা ভালো চেনেন। অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা টিভি মেরামত করেন।
স্থানীয়রা জানান, গেল ৪ বছর আগেও সবুজ স্থানীয় বালুয়া বাজারে একটি ডেন্টাল কেয়ার দিয়ে সেখানে অবৈধভাবে দাঁতের চিকিৎসা করতেন। পরে ইলেকট্রনিক্সের ব্যবসাও ছিলো শহরে। তবে, হঠাৎ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে যাওয়ায় মাটিতে যেন পা পড়েনা সবুজের। চলাফেরায় রীতিমতো হতভম্ভ স্থানীয় মানুষজন। 
অনুসন্ধান বলছে, ল্যাব সহকারী সবুজের ১৬তম গ্রেডের চাকরি করে মাত্র তিন বছরে এতো টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়। তবে তার আয়ের উৎস কি? 
অভিযোগ রয়েছে, গাইবান্ধার ডিভাইস সিন্ডিকেটের মুল হোতা মিজানুর রহমান সবুজ। যিনি সরকারি চাকরিতে পরীক্ষার্থীদের ইয়ার ডিভাইসের মাধ্যমে পরিক্ষায় পাশ করিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। 
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একটি সূত্র জানায়, তার এই ডিভাইস সিন্ডিকেটের সহযোদ্ধা তারই স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আঞ্জুয়ারা খাতুন। তিনিও গত দুই মাস পূর্বে গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডেপুটিশনে এসেছেন। মূলত স্বামী সবুজ এবং স্ত্রী দুই জনেই সংযুক্তিতে আসার প্রধান কারণ ওই ডিভাইস সিন্ডিকেট বাণিজ্যই। শহরের স্কুলগুলোতে বিভিন্ন পরিক্ষার কেন্দ্র হওয়ায় তারা দুজনে শহরে সংযুক্তি নিয়ে আসেন।
স্থানীয়রা জানান, মিজানুর রহমান সবুজ ঈদ উৎসবে মার্কেট (কেনাকাটা) করেন বিদেশে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি মার্কেট করতে যান দুবাই।
মিজানুর রহমানের বড় ভাইয়ের স্ত্রী বলেন, সবুজ বউ নিয়ে শহরের বাড়িতে থাকেন। গ্রামে কম আসেন। চাকরি নিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সবুজ আগে মানুষকে চাকরি নিয়ে দিতেন কিন্তু এখন আর ওগলা (ওইসব) করেন না, বাদ দিছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাঙ্গা ডিব বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, এলাকাসহ আশে-পাশের এলাকার বহুজনকে চাকরি দিয়েছে সবুজ। একেকটি চাকরি দিতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেন তিনি। 
হঠাৎ বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া এবং আয়ের উৎস সম্পর্কে জানতে চেয়ে মিজানুর রহমানের শহরের বাড়িতে গেলে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে থাকেন সবুজ কোনভাবেই সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি।
পরে সহকর্মীর মোবাইল ফোনে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি ডিভাইস সিন্ডিকেটের বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিককের নামে মামলা এবং আর্মির কাছে নালিশ করার হুমকি দেন।
তবে, এসময় তিনি বলেন, তার দুই বউ একজন প্রাইমারিতে এবং আরেকজন স্বাস্থ্য সহকারি হিসেবে সরকারি চাকরি করেন। তিনি নিজেও একজন সরকারি চাকরিজীবী।
তিনি দাবি করে বলেন, আমার নিজের নামে ৬০ লাখ টাকা, এক স্ত্রীর নামে ১০ লাখ এবং আরেক স্ত্রীর নামে ১৩ লাখ টাকা সহ প্রায় ১ কোটি টাকার মতো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি করেছি। এছাড়া গ্রামে জমি বিক্রি করেছি, আমার ব্যবসাও আছে। আমার কোন অবৈধ উপার্জন নেই। যদি মানুষ অভিযোগ করে থাকে তাহলে সেসব মিথ্যা।
এসব ব্যাপারে গাইবান্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার নূর মোহাম্মদ আনোয়ার রশিদ খান বলেন, মিজানুর রহমান সবুজ ১৬তম গ্রেডের একজন কর্মচারি। তার বেসিক বেতন মাত্র ৯৩০০ টাকা। অল্প কয়েক দিন আগে সবুজ রংপুর পলিটেকনিক থেকে সংযুক্তিতে এসেছে। তার এসব বিপুল সম্পত্তি এবং কর্মকান্ড সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। ভবিষ্যতে আমরা তার গতিবিধি খেয়াল করবো এবং প্রয়োজনে তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। এসময় তিনি তার বাড়ির ছবি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। 
উল্লেখ্য যে ৯-১০-২০৪  ইং তারিখে মিজানুর রহমান সবুজের নামে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়  সংবাদ প্রকাশ হলে সম্মানের ভয়ে অজ্ঞাত স্থানে লুকিয়ে থাকেন সবুজ। 

Side banner