Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

শেরপুরে প্রশাসনের গাড়িতে পিষে গেছে মাহবুবের স্বপ্ন


দৈনিক পরিবার | রাকিবুল আওয়াল পাপুল আগস্ট ১৪, ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম শেরপুরে প্রশাসনের গাড়িতে পিষে গেছে মাহবুবের স্বপ্ন

শেরপুর সদর উপজেলার পাকুরিয়া ইউনিয়নের তারাগড় গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব আলম (২০) ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তা। এইচএসসি পাসের পর গড়ে তুলেছিলেন আইটি ল্যাব এডুকেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি টিউশনি করতেন তিনি। এই দিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিলেন মাহবুব। শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের সময় প্রশাসনের গাড়িচাপায় নিহত হন তিনি।
৪ আগস্ট বিকেলে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল গাড়ি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সেখানে গুলিও চালানো হয়। এতে মাহবুবসহ পাঁচজন নিহত হন।
মাহবুবের বাবা মিরাজ আলী ১৭-১৮ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। তাঁর মা মাহফুজা গৃহিণী। চৈতনখিলা বটতলা গ্রামে ৮ শতক জমির বসতভিটা ছাড়া তাঁর বাবার আর কোনো ফসলি জমি নেই। মাহবুব শেরপুর সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আইটি ল্যাব এডুকেশন নামের ওই প্রতিষ্ঠানে তিনি বেসিক কম্পিউটার এবং গ্রাফিক ডিজাইনের কাজ শেখাতেন। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের হার পাওয়ার প্রকল্পের শেরপুর জেলার কো-অর্ডিনেটর ও প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি, একই সঙ্গে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ডেটা এন্ট্রির কাজ করতেন।
গত সোমবার বিকেলে সরেজমিনে মাহবুবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে নতুন ইট রাখা। কথা বলে জানা গেল, এই ইট মাহবুবই কিনেছেন নতুন ঘর তৈরির জন্য। সেগুলো দিয়ে নতুন বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। কাঁচা ভিটির ওপর নির্মিত মাহবুবদের টিনের বসতঘরের বারান্দায় একটি কম্পিউটার বসানো। পাশে পড়ার টেবিল। সেখানে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করতেন মাহবুব। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। মা মাহফুজা খানম ঘরের মধ্যে মাহবুবের বিভিন্ন পুরস্কারের ছবি ও মেডেল হাতিয়ে হাতিয়ে দেখছেন আর কান্নাকাটি করছেন। বলছিলেন, ‘ইন্টারে পড়া শুরুর পর থেইকাই কম্পিউটারে কাজ কইরা কামাই করা শুরু করছিল। কিছুদিন থেকে সে একাই আমাদের পরিবারটারে চালাইতেছিল। ইট কিনে আনছিল আমারে নতুন বাড়ি করে দিবার জন্য। কিন্তু তার মনের আশা আর পূরণ হইল না। আন্দোলন করতে গিয়া প্রশাসনের গাড়ির তলে পইড়া ও মইরা গেল। যে প্রশাসন অরে পুরস্কার দিছে, সেই প্রশাসনের গাড়িই তারে চাপা দিয়ে মারল। যারা আমার ছেলেরে মারছে, আমি তাদের বিচার ও শাস্তি চাই।’
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, মিরাজ আলীর দুই ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে মাহবুব ছিলেন চতুর্থ। মাহবুবের বড় দুই বোন মিলিনা ও সেলিনার বিয়ে হয়েছে। বড় ভাই মাজহারুল ইসলাম শেরপুর সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষা দিয়েছেন। আর ছোট বোন মারিয়া চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। মাহবুবের বড় ভাই বলেন, ‘আমার ভাই কম্পিউটার ট্রেনিং করিয়ে শুধু তার নিজের খরচই চালায়নি। আমাদের খরচও দিয়েছে। কারও সঙ্গে তার কোনো বিরোধ ছিল না। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।

Side banner