দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফুলবাড়ী উপজেলায় বসেছে ২০১ বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা। মেলাকে কেন্দ্রে করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া নিয়ে এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১২ টার দিকে মেলা চত্বরে পক্ষকাল ব্যাপী ঘোড়ার মেলার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। মেলা কমিটির সভাপতি শিক্ষক মো. আফতাবুজ্জামানের সভাপতিত্বে আয়োজিত মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন, প্রধান মেহমান হিসেবে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়ী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহাজুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম খন্দকার মহিব্বুল।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক সাইদুর রহমান মাস্টার, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক জামান সরকার, আলাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম, ইউনিয়ন যুবদলের হাফিজুর রহমান হাফিজ, মেলার ইজারাদার শফিকুল ইসলাম শফি প্রমুখ।
শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে অতিথিদ্বয় ঘোড়ার মেলার উদ্বোধন করেন। এরপরই ঘোড়া বেচাকেনার জন্য ছাপা বের হয়। ঘোড়ার এ মেলায় বসেছে গ্রামীণ মেলাসহ বিভিন্ন খাওয়ার দোকান। ঘোড়ার মেলা উপলক্ষে মেলায় আগত ঘোড়া ব্যবসায়ীদের ঘোড়ার অংশগ্রহণে ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঘোড়দৌঁড় দেখতে বিভিন্নস্থান থেকে ছুঁটে আসেন নানা বয়সী নারী ও পুরুষ দর্শনার্থী।
ঘোড়ার মেলাকে কেন্দ্র করে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী এলাকাজুড়ে বসেছে গ্রামীণ মেলা। মেলায় আগতদের বিনোদনে জন্য দোলনা, নাগরদোলা, সার্কাস, গ্রামীণ বিভিন্ন খাবার দোকান ও খেলাধূলার আয়োজনসহ ঘোড়দৌঁড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে সব বয়সি নারী-পুরুষের ব্যাপক সমাগম ঘটছে। দর্শনার্থীদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী ও তরুণ-তরুণিদেরসহ নারীদের উপস্থিতি আধিক্য থাকছে।
জানা যায়, প্রতি বাংলা বছরের বৈশাখ মাসের ১৩ তারিখ থেকে ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের মেলাবাড়ী মাঠে এই ঐতিহ্যবাহী বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা বসে। মেলাটি অন্তত ১৫ দিন স্থায়ী হয়। তবে স্থানীয়ভাবে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া তেমন বেচাকেনা না হলেও ঘোড়াই মূলত বেচাকেনা হয়ে থাকে। এ কারণে এটি বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলা নামেই দেশব্যাপী পরিচিত।
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সুখনগরি থেকে ঘোড়া নিয়ে এ মেলায় এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম, জহুরুল ইসলাম ও সামিউল ইসলাম। তারা বলেন, ছোটবড় মিলিয়ে ১৪ টি ঘোড়া নিয়ে বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলায় এসেছেন। এগুলোর দাম রেখেছেন সর্বনিম্ন ৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। এরমধ্যে ২-১ হাজার টাকা কমবেশি হতে পারে। সারাবছর দেশের বিভিন্নস্থানেনর ঘোড়ার মেলায় ঘোড়া নিয়ে যান বেচাবিক্রি করতে। ঘোড়া বেচাকেনা করেই তার জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। মেলায় এবার ঘোড়ার ক্রেতার অভাব রয়েছে, এজন্য বেচাবিক্রিও কম হচ্ছে।
নওগাঁও জেলার ধামইরহাট উপজেলার সদরের বাসিন্দা ঘোড়া ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মেলায় বিক্রির জন্য ছোটবড় ৭ টি ঘোড়া এনেছেন। আকার ভেদে ৭টি ঘোড়ার দাম রেখেছেন ৭ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ক্রেতারা ৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে দাম বলছেন, তাই এখন পর্যন্ত একটিও ঘোড়া বিক্রি করতে পারেননি। ১৯৯০ সাল থেকে এই মেলায় ঘোড়া বেচবিক্রি করে থাকেন। তবে এ বছর ঘোড়ার বেচাবিক্রিও কম হচ্ছে।
আলাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীণ শিক্ষক দছিম উদ্দিন মন্ডল বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বুড়া চিন্তামন ঘোড়ার মেলাটি দেশব্যাপী ব্যাপক পরিচিত। ঘোড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই এই মেলা শুরু এবং শেষ হওয়ার তারিখ জানেন। এ কারণে প্রতিবছর মেলা শুরুর আগ থেকেই ঘোড়া বেচাকেনা শুরু হয়। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে মেলাটি শুরু এবং শেষ হয়।
উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফুলবাড়ী পৌর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক শাহাজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা ধ্বংস করে দিয়েছে। এবারই প্রথম এলাকার সর্বস্তরের মানুষ মুক্ত মনে মেলায় এসে মেলা উপভোগ করছেন। এ মেলার ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম খন্দকার মহিব্বুল বলেন, এটি এলাকার একটি ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ঘোড়া ব্যবসায়ীরা এসেছেন। মেলার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সদস্যরা নজরারি রাখছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে অনুমোদনপ্রাপ্ত এই ঘোড়ার মেলায় উপজেলা প্রশাসন থেকে সার্বিক নজরদারি রয়েছে। যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
আপনার মতামত লিখুন :