জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই, প্রকৃতির ভয়াল দুর্যোগ, কখনো দস্যুদের হামলা, আবার কখনো দাদনের দায়ে আটকা চির দারিদ্র্যের সঙ্গে জিম্মি বরগুনা জেলা পাথরঘাটা উপজেলার জেলেরা।
সব সমস্যা মোকাবিলার পর তিন বেলা খেয়ে বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে যান তারা। এছাড়া বছরের প্রায় সারাটা মৌসুম সরকারি বিধি-নিষেধসহ জেলেদের বহুমুখী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়।
উপকূলজুড়ে ইলিশের মৌসুম শুরু হয়েছে। এরই মাঝে ১৪ এপিল মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে মাছ ধরায় ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা, বলবৎ থাকবে ১১ জুন পর্যন্ত। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন উপকূলের জেলেরা। এক সপ্তাহেও সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে নানা সংকটে তারা। মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসায় কবে নাগাদ সরকারি প্রণোদনা পাবে তাও নিশ্চিত করতে পারেনি স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে মিল রেখে দেশে প্রথমবারের মতো সমুদ্রে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণায় জেলেরা খুশি হলেও, যথাসময়ে সরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় এর সুফল নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটায় প্রায় ২৫ হাজার জেলে থাকলেও নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৭ হাজার। যাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ১০ হাজার ৫০ জন। সমুদ্রগামী একজন জেলেদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ থাকলেও এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাননি পাথরঘাটা উপজেলার জেলা।
জেলে রফিক মাঝি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে ট্রলার নিয়ে ঘাটে থাকতে হবে প্রায় দুমাস। দুই মাসের জন্য অন্য কোন কাজ করাও সম্ভব নয় আয়ের উৎস বন্ধ। প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি সহায়তা পেলেও এবছর এক সপ্তাহ হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে আমরা কোন সহায়তা পাইনি।
আরেক জেলে ইব্রাহিম খলিল বলেন, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের মাত্র ৮৬ কেজি চাল দেওয়া হবে। তাও এবছর কোন সহায়তা পায়নি। পরিবার পরিজন নিয়ে বর্তমানে আমাদের খুব অভাবে দিন কাটছে। প্রতি বছরের মত এবারও সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে কিছুটা হলেও আমাদের উপকারে আসতো। সরকারের কাছে আবেদন জানাই অতি দ্রুত যেন আমাদের জেলেদের জন্য কমবেশি সহায়তা দেওয়া হয়।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, ‘১৫ এপ্রিল থেকে ১১ মে পর্যন্ত ৫৮ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা জারি হয়েছে। পাথরঘাটায় প্রায় ২৫ হাজার জেলে থাকলেও নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৭ হাজার। যাদের মধ্যে সমুদ্রগামী জেলে ১০ হাজার ৫০ জন। সমুদ্রগামী একজন জেলেদের জন্য ৮৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ রয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন সহায়তা আসেনি। তবে জেলেদের সরকারি সহায়তার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অতি দ্রুতই জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দ আসবে।
আপনার মতামত লিখুন :