Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

১৭ এপ্রিল: ফুলবাড়ীর আঁখিরা গণহত্যা দিবস


দৈনিক পরিবার | প্লাবন শুভ এপ্রিল ১৭, ২০২৫, ০৯:৫২ পিএম ১৭ এপ্রিল: ফুলবাড়ীর আঁখিরা গণহত্যা দিবস

১৭ এপ্রিল। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর বর্বরোচিত লোমহর্ষক আঁখিরা গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালে আজকের এইদিনে ফুলবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী  বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাঙালি হিন্দু পরিবারের দেড় শতাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতিসহ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে ভারতে পৌঁছে দেয়ার কথা বলে সর্বস্ব লুঠ করে খান সেনাদের হাতে তাদেরকে তুলে দেয় স্থানীয় কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার। পরে তাদেরকে  ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়নের বারাইহাটের আঁখিরা নামকস্থানের পুকুর পাড়ে সাড়িভাবে দাঁড় করে মেশিনগানের ব্রাশফায়ারে হত্যাযজ্ঞ চালায় খানসেনারা। বেঁচে থাকাদেরও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। দেশ স্বাধীনের পর থেকেই আঁখিরা গণহত্যা দিবস পালন করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী খানসেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথে ভারতে আশ্রয় নিতে শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল আজকের এই দিনে ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রামভন্দ্রপুর গ্রামের কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার পার্শ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ, বিরামপুর, পার্বতীপুরের শেরপুর, ভবানীপুর, বদরগঞ্জ ও খোলাহাটিসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক বাঙালি হিন্দু পরিবারের দেড়শতাধিক নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতিসহ শিশু-কিশোর-কিশোরীকে নিরাপদে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে ফুলবাড়ীতে নিয়ে আসে। এরপর রাজাকার কেনান সরকার অস্ত্রের মুখে বাঙালি পরিবারগুলোর সঙ্গে থাকা অর্থ সম্পদসহ স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে তুলে দেয় খানসেনাদের হাতে। ওইদিন সকাল ১১টার দিকে আঁখিরা পুকুর পাড়ে নিয়ে সবাইকে লাইনে দাঁড় করে মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারে হত্যাযজ্ঞ চালায় খানসেনারা। এরপরও যারা বেঁচে ছিলেন তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তবে দেশ স্বাধীনের পর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয় কুখ্যাত রাজাকার কেনান সরকার।
প্রত্যক্ষদর্শী সেই সময়ের ৮ বছরের বালক বারাইহাটের মোসলেসুর রহমান জানান, লুকিয়ে থেকে খানসেনাদের হত্যাযজ্ঞ দেখার অপরাধে এলাকার ৮ জনকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে খানসেনারা। বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে থাকে নিরীহ বাঙালি নারী-পুরুষের লাশ। পুকুরপাড় এলাকায় স্বাধীনতার পরও মানুষের হাড়গোড়সহ মাথার খুলি পড়ে ছিল।
এদিকে এই লোকহর্ষক গণহত্যার ৫০ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের “১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গণহত্যার জন্য ব্যবহৃত বধ্যভূমি সমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়ে) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালে ফুলবাড়ীর আঁখিরা বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। গত ২০২৪ সাল থেকে সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. এছার উদ্দিনের নেতৃত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধারা বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণসহ সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা ও দোয়া করেন।

Side banner