সমতল ভূমি বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ৭০ জনের মাঝে বকনা গরু বিতরণের দিন ছিল। সাজানো ছিল মঞ্চ, এসেছিলেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আরো অনেক অতিথিদ্বয়। কিন্তু দরপত্রের শর্তানুযায়ী বকনা গরু সরবরাহ না করার বিষয়টি আসে স্থানীয়দের নজরে। এতেই বাধে বিপত্তি। ভেস্তে যায় সব, সংশ্লিষ্টদের নির্দেশে বন্ধ হয় বিতরণী কার্যক্রম। এতে গরু নিতে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষরা গরু না নিয়েই ফিরে যান নিজ নিজ বাড়িতে।
এমনি এক দৃশ্য বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দেখা মিলে প্রাণিসম্পদ চত্বরে। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছিল এই কার্যক্রমের।
জানা যায়, সমতল ভূমি বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আর্থ সামাজিক ও জীবন মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ৭০ জনের মাঝে বকনা গরু বিতরণের দিন ছিল।
এ জন্য প্রাণিসম্পদক চত্বরে বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হয়। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দরপত্রের শর্তানুযায়ী প্রতিটি বকনা গরুর ওজন ১০০ কেজি এবং বয়স দেড় বছর হওয়ার কথা। কিন্তু জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল নামের সরবরাহকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দরপত্রের শর্তকে উপেক্ষা করে আকার প্রকার ভেদে প্রতিটির ওজন গড়ে ৬৫ থেকে ৭০ কেজির মধ্যে হাড্ডিসার এবং বয়স গড়ে এক বছরের নিচের বকনা গরু বিতরণের জন্য নিয়ে আসে। বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে আসলে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বকনা গরু বিতরণ কমিটির সভাপতি মো. ইসাহাক আলী এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সারোয়ার জাহানকে জানানো হয়। পরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বকনা গরু বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে দরপত্রের শর্তমোতাবেক আগামীতে বকনা গরু সরবরাহের নিদের্শ দেওয়া হয়। এতে গরু না পেয়ে হতাশ হয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বকনা গরু নিতে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের নারী ও পুরুষরা।
বকনা গরু সরবরাহকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনটেক ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি ওমর ফারুক বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে সব গরু আনতে বলা হয়েছে, তারা সেভাবেই গরু এনেছেন। এর বাইরে কোনো কিছু তিনি বলতে পারবেন না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বকনা গরু বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ডা. সারোয়ার জাহান বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বকনা গরু বিতরনের জন্য প্রাণিসম্পদ চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও শুধুমাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্রের শর্তানুযায়ী গরু সরবরাহ না করায় বিতরণী কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। দরপত্রের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চলতি এপ্রিল মাসের মধ্যেই বকনা গরু সরবরাহ করতে হবে। এটি করা না হলে তার কার্যাদেশ বাতিল করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে বকনা গরু বিতরণ কমিটির সভাপতি মো. ইসাহাক আলী বলেন, দরপত্র মোতাবেক গরু সরবরাহ না করায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাঝে গরু বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
বকনা গরু বিতরণ অনুষ্ঠানে আসা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, ঠিকাদারের কাছে বকনা গরু দরপত্র অনুযায়ী বুঝে না পাওয়ায় বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বিগত সরকারের সময় এই প্রকল্পের বকনা গরু সরবরাহের দায়িত্ব পায়। প্রকল্পটি আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত চলমান থাকবে।
আপনার মতামত লিখুন :