Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫, ১ বৈশাখ ১৪৩২

সন্দ্বীপে যুক্ত হচ্ছে ভাসানচর, আন্দোলনে হাতিয়া


দৈনিক পরিবার | স্টাফ রিপোর্টার এপ্রিল ১০, ২০২৫, ০৯:১৬ এএম সন্দ্বীপে যুক্ত হচ্ছে ভাসানচর, আন্দোলনে হাতিয়া

বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ভাসানচর। ২০১০ সালে চরটি দৃশ্যমান হলেও ২০১৭ সালে এসে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কারণে আলোচনায় আসে দ্বীপটি। ওই বছরই জরিপের মাধ্যমে দ্বীপটি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রভাব খাটিয়ে এটিকে হাতিয়ার সঙ্গে যুক্ত করেছেন বলে তখন অভিযোগ তুলেছিল চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দারা। তবে ক্ষোভ থাকলে ওবায়দুল কাদেরের প্রভাবে সন্দ্বীপের লোকজন ওইসময় বড় ধরনের কোনো আন্দোলনে যেতে পারেননি। পাশাপাশি সন্দ্বীপের তৎকালীন প্রভাবশালী কোনো রাজনৈতিক নেতাও মুখ খুলতে সাহস করেননি।
তবে ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকারের পতন হয়। এরপর থেকে দ্বীপটি নিজের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে মরিয়া হয়ে ওঠে সন্দ্বীপের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাদের দাবি ও নানামুখী তৎপরতার মুখে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। এতে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তাদের পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গঠিত কমিটির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে ভাসানচর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের অংশ বলে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদিদের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম (সন্দ্বীপ) ও নোয়াখালীর (হাতিয়া) অংশে আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তিতে গঠিত কমিটির প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিরোধপূর্ণ ভাসানচরটি জেগে ওঠা নতুন চর। ২০১৬-১৭ জরিপ মৌসুমে ওই চরে দিয়ারা জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই দিয়ারা জরিপে ভাসানচরকে ৬টি মৌজায় ভাগ করা হয়। একইসঙ্গে ভাসানচরকে নোয়াখালী জেলার অন্তর্গত হিসাবে দেখানো হয়। কিন্তু সিএস ও আরএস-এর মৌজা ম্যাপগুলো জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে পেন্টাগ্রাফ করে দেখা গেছে জেগে ওঠা চর চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত। এমতাবস্থায় সব দিক পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভাসানচরটি সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তার চিঠিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে ফাইল পাঠান।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে ভাসানচরকে সন্দ্বীপের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে। কারণ ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- বিরোধপূর্ণ চরের ৬টি মৌজা ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা ও কাউয়ারচরের সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) ও আরএস-এ পেন্টাগ্রাফ এবং আর্কাইভ জিআইএস পদ্ধতি পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ভাসানচরের ৬টি মৌজা চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সীমানায় অন্তর্ভুক্ত মর্মে দৃশ্যমান হয়। কিন্তু দিয়ারা জরিপে এই ৬টি মৌজাকে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। সব দিক বিবেচনা করে বিরোধপূর্ণ এ চরটি (ভাসানচর) সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত মর্মে প্রতীয়মান হয়।
সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির সদস্য ও সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিগ্যান চাকমা বলেন, ভাসানচর সন্দ্বীপ থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। অপরদিকে হাতিয়া থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। ১৯৫৪ সালে এটি নোয়াখালী থেকে আলাদা হয়ে যায়, পরে ১৯৫৫ সালে সন্দ্বীপের গেজেটভুক্ত হয়। গেজেটে সন্দ্বীপের ৬০টি মৌজার কথা উল্লেখ থাকলেও নদী ভাঙনের ফলে বর্তমানে ৩৮টি মৌজার অস্তিত্ব রয়েছে। উরিরচরের কিছু মৌজাও সাগরের ভাঙনে একেবারে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। ২০১৪ সালেও সন্দ্বীপের ১০৫০ হেক্টর জমিতে বনায়ন করা হয়েছে যার অনুকূলে গেজেট আছে। কাজেই এটা স্পষ্ট ভাসানচর সন্দ্বীপের অংশ। 
এদিকে ভাসানচর সন্দ্বীপের মানচিত্রে যুক্ত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসছে- বিষয়টি জানাজানি হলে হাতিয়ার লোকজনের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত ৭ এপ্রিল জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। এতে তিনি ভাসানচরকে হাতিয়ার অংশ উল্লেখ করে লেখেন ‘ভাসানচর হাতিয়ার ছিল, হাতিয়ারই থাকবে। দরকার শুধু ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদ।’
সবশেষ বুধবার (৯ এপ্রিল) চট্টগ্রামে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে হাতিয়া ছাত্র যুব পরিষদ নামে একটি সংগঠন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে হাতিয়ার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেয়। এতে ভাসানচরকে নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করার ষড়যন্ত্রের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সন্দ্বীপের বাসিন্দা ফাউজুল কবিরকে দায়ী করা হয়। এসময় বক্তারা তার পদত্যাগের দাবি করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভাসানচরকে হাতিয়া উপজেলার অনুকূলে দিয়ারা জরীপ সম্পাদন করে চূড়ান্ত রেকর্ড প্রকাশ ও হাতিয়া উপজেলাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নের অন্তর্গত ভাসানচর থানা গঠন শান্তিপূর্ণ ও বিরোধ ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। একটি কুচক্রী মহল অত্র অঞ্চলের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করার অপপ্রয়াসে ভাসানচরকে একটি ইস্যু হিসেবে সামনে এনেছে যা অনভিপ্রেত। ১৯৬০-এর দশক হতে হাতিয়ার নদী ভাঙন সমস্যা তীব্রতর হয়ে ওঠে। ভাঙনে বিগত প্রায় ৬৮ বছরে হাতিয়ার বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সাহেবানীর চর নামে হাতিয়ার পূর্ব পার্শ্বে একটি চর ভেঙে সম্পূর্ণরূপেই বিলীন হয়ে গেছে মেঘনায়।

Side banner