Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১
ধামরাইয়ে বেপরোয়া মাটি ব্যবসায়ীরা

৩ ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন


দৈনিক পরিবার | মোস্তাফিজুর রহমান মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৫:১৬ পিএম ৩ ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না প্রশাসন

ঢাকার ধামরাইয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙুল দেখিয়ে ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে প্রভাবশালী মাটির ব্যবসায়ীরা। উপজেলা প্রশাসন ইতোমধ্যেই  মাটিকাটার বেশ কয়েকটি  ভেক্যু জব্দসহ জরিমানা করলেও কোনভাবেই ৩ ফসলি জমির মাটিকাটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। 
জমির মালিকদের টাকার লোভ, ভয়ভীতি ও বলপ্রয়োগসহ নানা কৌশল অবলম্বন করে কিনে নিচ্ছে ৩ ফসলি জমির মাটি। এ মাটি ক্রয়- বিক্রয় নিয়েও চলছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে গ্রুপিং, হামলা- পাল্টা হামলা ও  মামলা পর্যন্ত হয়েছে। শুধু তাই নয় বালিয়া এলাকায় ভেক্যু পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এর পরও থেমে নেই তিন ফসলি জমির মাটি কাটা। 
অধিক মুনাফার লোভে প্রভাবশালী অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে  প্রায় অর্ধশতাধিক স্থান থেকে তিন ফসলি জমির মাটি গভীর করে কেটে নিয়ে যাওয়ায় একদিকে কমছে কৃষি জমি। অপরদিকে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে  জমির শ্রেণি। এসব অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা ভেক্যু দিয়ে ২০-২৫ ফুট গভীর করে মাটিকাটার ফলে পাশের জমির আইল ভেঙে পড়ছে। এতে বাধ্য হয়ে পাশের জমির মালিকও মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনে প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ করতে পারছে না এমনটিই ধারণা করা হচ্ছে। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারা ধামরাই উপজেলা জুরে  ফসলি জমির মাটি কাটার এক রকমের  হিড়িক পড়ে গেছে। রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নাম ভাঙিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি মাটির ব্যবসা করে যাচ্ছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই শুরু হয় মাটি কাটার ধুম। সারা রাত ধরে চলে ফসলি জমির মাটি কাটার উৎসব। মাটির ট্রাক চলাচলের শব্দে রাতে অনেক এলাকার মানুষ ঠিকমত ঘুমাতেও পাড়ে না। অপরদিকে বসত বাড়ি, রাস্তা ঘাট, বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধুলোয় দূষর হয়ে পড়েছে। ১৬ টি  ইউনিয়নেই রয়েছে মাটি ব্যবসায়ীদের  চক্র। কিছুতেই তাদের থামানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন শত শত মাটির ট্রাক গ্রামীণ রাস্তা দিয়ে ইট ভাটায় যাচ্ছে। এতে গ্রামীণ রাস্তাও  ভেঙে বেহাল অবস্থা হয়ে গেছে। 
দেখা যায়, উপজেলার ভাড়ারিয়া, যাদবপুর, আমতা, কুশুরা, বালিয়া, নান্নার, সূয়াপুর, কুল্লা, গাঙ্গুটিয়া, সানোড়া ইউনিয়নসহ প্রায় ইউনিয়নেই চলছে কৃষি জমির মাটি কাটার মহা উৎসব। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে দেদারছে। এতে একটি জমির মাটি কাটারপর পাশের জমি ভেঙে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তার জমিও বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি অনেকে। এনিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় মানববন্ধন এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং থানায় ও অভিযোগ  করছেন ভুক্তভোগীরা। 
সূয়াপুর ইউনিয়নের দেলধা এলাকায় মাটি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পর পর দুই বার  মারামারি হয়েছে। এ ঘটনায় পরস্পর বিরোধী  মামলাও  হয়েছে। বালিয়া ইউনিয়নের সূত্রাপুর-মাদারপুর এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী ক্ষুব্দ হয়ে একটি ভেক্যু পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। এছাড়াও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় আওয়ামী লীগের সহায়তাকারীসহ বিএনপির দুই গ্রুপ মাটির লিক (মাটি নেয়ার রাস্তা) দখল নিতে গিয়ে  মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মফিকুল ইসলামসহ কয়েকজন মারাত্মক আহত হয়েছেন। রাস্তায় ধূলা কমাতে পানি দেওয়ার কথা বলায় আব্দুল গফুর নামে এক দোকানিকে ব্যাপক মারধর করেছে। কেউ কোন কথা বলতে সাহস পায় না। পরিস্থিতি দেখে মনে হয় প্রশাসন অসহায় হয়ে পড়েছে। মাটি ব্যবসা চক্রের সদস্য খোরশেদ আলমকে মারামারির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, দূবৃত্তরা আমার উপর হামলা করেছে। তবে ফসলি জমির মাটি কাটার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি। 
ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, তিন ফসলি জমির মাটি বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করতে হলে অবশ্যই কৃষি জমি রক্ষা করতে হবে এর কোন বিকল্প নেই।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে অভিযোগ এলেই আমি পুলিশ পাঠিয়ে দিচ্ছি মাটি কাটা বন্ধ করতে। 
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, ধামরাই উপজেলার এরিয়া অনেক বড়। মাটির ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত ধুরন্ধর। অনেক সময় মাটি কাটা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা রাতে  ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে জনবল কম থাকায় সব সময় অভিযানে যেতে পারছিনা। বিভিন্ন এলাকায়  মাটিকাটার  একাধিক ভেক্যু এর পূর্বেও জব্দ করা হয়েছে। মোটা অংকের টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।  থানা পুলিশের সহায়তাও  চাওয়া হয় মাটিকাটা বন্ধ করতে। মাটিকাটা বন্ধের জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ সকলের আন্তরিকতার প্রয়োজন। ফসলি জমির মাটি রক্ষায়  মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে এবং থাকবে।

Side banner