ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সোনারামপুর ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামের খালের ওপর নির্মিত সেতুটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় লোহার হাতল (রেলিং) দেয়া সেতুর মাঝখানে কয়েকটি স্থান ভেঙে পড়েছে। বিকল্প সড়ক না থাকায় ভাঙা সেতুতে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে গ্রামের মানুষ।
জানা গেছে, চরশিবপুর সড়কে প্রায় ২ যুগ আগে এলজিইডির অর্থায়নে প্রায় ৩৬.৫৭৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও মাত্র ২.৫৯১ মিটার প্রস্থের সরু সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
এই গ্রামে দুইটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ৩টি মহিলা মাদ্রাসা ও ২টি পুরুষ মাদ্রাসার হাজারও শিক্ষার্থী ভয়ংকর এই সেতু দিয়ে নিত্যদিন যাতায়াত করে। তাছাড়া গ্রামের প্রায় ১২ হাজার বাসিন্দা সড়কটি ব্যবহার করে।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ধরে সেতুর কয়েক স্থানে মূল সেতু ও হাতল ভেঙে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও এলজিইডি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এটি সংস্কারে অথবা নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেননি। ফলে ঝুঁকি নিয়েই সেতু পারাপার হচ্ছে মোটরসাইকেল, অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন।
স্থানীয়রা জানান, যে কোনো মুহুর্তে সেতুটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভারী যানবাহন চলাচল না করায় ফসল ও ব্যবসার পণ্য পরিবহন, অন্যান্য সেবা ও বাসাবাড়ির নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিন দেখা গেছে, সেতুটির বেহাল দশা। সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়ছে। সেতুর ঢালাই স্তরে অন্তত চারটি স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বিকল্প সড়ক না থাকায় জরাজীর্ণ সেতু দিয়ে অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত ভ্যানগাড়ি ও মোটরবাইকে লোকজন ও স্কুল মাদ্রাসার পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পারাপার হচ্ছেন। সেতুর পাটাতন ধসে যে কোনো মুহুর্তে বড় দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, প্রতিদিনই তারা ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে এই সেতু দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। দ্রুত নতুন একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান তারা।
শিবপুর গ্রামের রাসেল সরকার জানান, এই সেতুর দুই পাড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিভিন্ন স্তরের মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতিদিন ছেলেমেয়েরা ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যায়। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তায় থাকেন। অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসার জন্য উপজেলা শহরে নেওয়া খুবই কষ্টকর।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, কয়েক দিন আগে রাতে সেতু অতিক্রম করার সময় চাকা গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে যায়। এতে তাঁর একটি পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। এছাড়াও গত বছর একটি গরু ব্রীজ থেকে পড়ে মারা গেছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক সোহেইল আহমাদ বলেন, কিছুদিন আগে এই সেতু দিয়ে একটি অটো গাড়ি পার হতে গিয়ে উল্টে যায়। এই সেতুটির বেহাল দশার কারণে দুই পাশের বাসিন্দারা কয়েক বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। রেলিং ভেঙ্গে যাওয়ায় আমরা ভয়ে নিয়ে যাতায়াত করি। রাতে ভয়টা থাকে বেশী। দ্রুত সেতুটি পুনর্নিমাণের দাবি জানান তিনি।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সেতুটি আর সেতু থাকবে না। এখানে মাটি ভরাট করে ১৮ ফিট চওড়া সিসি ঢালাই করা সরাসরি রাস্তা করা হবে। এলাকাবাসীর দূর্ভোগ আর পোহাতে হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :