Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১
রাতারাতি নাম বদলে গেল

বাঞ্ছারামপুরে জেলা পরিষদের কোটি টাকার অডিটোরিয়াম এখন বিষফোঁড়া


দৈনিক পরিবার | ফয়সল আহমেদ খান ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ০৩:০৭ পিএম বাঞ্ছারামপুরে জেলা পরিষদের কোটি টাকার অডিটোরিয়াম এখন বিষফোঁড়া

কথায় আছে লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন। অনেকটা সেভাবেই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে সরকারি টাকার যথেচ্ছ অপব্যবহার করেছেন। অনেকেই এসব করেছেন এলাকার মানুষের কাছে জনদরদি বা সমাজসেবীর তকমা লাগাতে। কেউ আবার উচ্চ দামে নিজের জমি বিক্রি করার উদ্দেশ্যে কিংবা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে নিয়েছেন ‘সুবিধাজনক’ এসব সরকারি প্রকল্প। বাদ যাননি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের সাবেক এমপি  ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামও।
তার বড় ভাই মরহুম আনোয়ারুল ইসলাম আশ্রাফের নামে নিজ গ্রামে নিজেকে জাহির করা ও প্রভাব দেখানোর জন্য জনগণের টাকায় গড়ে তুলেন আধুনিক অডিটোরিয়াম। যা এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। না পারছে পরিত্যক্ত ঘোষনা করতে, না পারছে চালু করতে। বিদ্যুৎ বিল, রক্ষণাবেক্ষণ ও স্টাফদের বেতন দিয়ে প্রতি বছর গচ্চা যাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
বিগত ৫ আগস্টের পর এলাকাবাসীর দাবীর মুখে বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ারুল ইসলাম আশ্রাফ  অডিটোরিয়াম এর নাম পাল্টে করা হয় শাহ রাহাত আলী অডিটোরিয়াম।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলা ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নে প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশাল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬'শ আসনের ডিজিটাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ করান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদকে দিয়ে। বাঞ্ছারামপুর সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় উদ্ধোধনের ১২ বছরে মাত্র ৫ টি প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান মিলনায়তনের কেয়ারটেকার জালাল মিয়া। তবে সবগুলো বিনামূল্যের। একটাও ভাড়া দিয়ে সরকারি রাজস্ব ঘরে দিতে পারেনি।
তিনি আরও জানান, ৫টির মধ্যে ৩টি ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রোগ্রাম ও ২টি ছিল পার্শ্ববর্তী শাহ রাহাত আলী কলেজের অনুষ্ঠান। ১২ বছরের ৫টি অনুষ্ঠানই ছিল ফ্রী। ফলে সরকার কোন টাকাই পায়নি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি। বাঞ্ছারামপুরের পল্লী গ্রামে যে অডিটোরিয়াম করা হয়েছে তা ঠিক করা হয়নি। কারণ, ২০১০-১১ অর্থ বছরে ৩ কোটি টাকা দিয়ে দিয়ে শুধু ভবন করা হলেও আজ পর্যন্ত একটি টাকাও রাজস্ব আসেনি। হলরুম ভাড়া দেয়া যায়নি। উল্টো কেয়ারটেকার কে প্রতি মাসে বেতন দিতে হচ্ছে ১৬ হাজার ৫শ টাকা। স্রেফ অপচয়।
তিনি তথ্য দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগের সরকার অডিটোরিয়ামটির সংস্কার কাজ করার জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে যায়। আমরা ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ের পর কোন কাজে আসবে না জেনে ৮৫ লক্ষ টাকা সংস্কার কাজ শেষ না করেই ফেরত নিয়ে আসি। এই নিয়ে পরে ভাবা যাবে।
গত মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী জানান, ওই সময় ক্যাপ্টেন তাজ তার ভাই আশরাফ চেয়ারম্যানের নামে কমদামে জমি কিনে এই অডিটোরিয়াম গড়ে তুলেন, যা বর্তমানে কোন কাজে আসে না। অন্যকিছু স্থাপন করলে জনতার কাজে লাগতো।
এদিকে ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম বিভিন্ন মামলায় কারাগারে। যার নামে এই অডিটোরিয়াম, সেই আনোয়ারুল ইসলাম আশ্রাফ চেয়ারম্যান মারা গেছেন অনেক পূর্বেই।
বাঞ্ছারামপুরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষক, রূপসদী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস বিএসসি বলেন, জেলা পরিষদ এমন অডিটোরিয়াম বানিয়েছেন সরকারি টাকায়, যা এখন বোঝায় পরিণত হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের এই অডিটোরিয়াম এখন কোন কাজে আসে না। এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা হোক।
বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আ. করিম (আওয়ামী লীগ আমলে পুনঃ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত) বলেন, আমি শুনেছি মাজার কমিটি অডিটোরিয়ামটির জমি কেনার জন্য অর্থ দিয়েছিলো। তবে এখানে দলীয় অনেক প্রোগ্রাম হয়েছে।
অন্যদিকে শাহ রাহাত আলী কলেজের প্রিন্সিপাল জাহাঙ্গীর আলম দাবী করে বলেন, অডিটোরিয়ামের বিশাল জায়গা কলেজ থেকে নেয়া হয়েছে। কলেজের জায়গা কলেজকে ফেরত দেয়া হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বলেন, অনেকেই নিজ এলাকায় প্রকল্প নিয়েছেন। তবে সব প্রকল্পকে ঢালাওভাবে অপচয়ের প্রকল্প বলা ঠিক হবে না। কিছু প্রকল্প জনবান্ধবও ছিল। তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর তালিকা তৈরির কাজ চলছে। যেগুলোর কাজ মাঝপথে রয়েছে বা কিছু অর্থ ব্যয় হয়েছে। এমন প্রকল্প একটি পর্যায়ে পৌঁছার পর বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হবে না, বরং এটিকে যেনো পরিত্যক্ত ঘোষনা না করে সমাজের ভালো কোনো কাজে লাগানো যায় সে জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Side banner