Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১
প্রতি বছর কমছে ৫০ হেক্টর আবাদি জমি

বাঞ্ছারামপুরে ইটভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলী জমি


দৈনিক পরিবার | ফয়সল আহমেদ খান জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ১২:৫২ এএম বাঞ্ছারামপুরে ইটভাটা গিলে খাচ্ছে ফসলী জমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ভাটায় নিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ফলে আবাদি জমির পুষ্টি উপাদান কমে কৃষিপণ্যের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৯০ হেক্টর তিন ফসলি আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমিতে ধান, পাট, পেঁয়াজ, গম, শাকসবজি, সরিষা, মরিচ, বেগুন, ডালসহ বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে। কয়েক বছর ধরে সরকারি নিয়ম অমান্য করে এসব আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করছেন ভাটার মালিকেরা। ফলে প্রতি বছর ৫০ থেকে ৬০ হেক্টর আবাদি জমি ইটভাটার জন্য কমে যাচ্ছে। 
ফসল উৎপাদনের জন্য শতকরা ৫ ভাগ যে জৈব উপাদান থাকা দরকার, তা সাধারণত মাটির ওপর থেকে ৮ ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে। কিন্তু ইটভাটার মালিকেরা মাটির উপরিভাগের এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত কেটে নিচ্ছেন। এতে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে।
বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৫টি ইটভাটা রয়েছে। এগুলো হলো মেসার্স কেবিসি, এইচ কে, মিতালী, সাফাত এবং সনিয়া ব্রিকস। 
সরকারি বিধি মোতাবেক সর্বোচ্চ সাড়ে চার বিঘা অকৃষি জমিতে একটি ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে মানা হয়নি। এ ছাড়া বেশির ভাগ ইটভাটা তৈরি করা হয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। বেশিরভাগ ইটভটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে হাজার হাজার মণ কাঠ। দশানী গ্রামে কেবিসি ব্রিকস মেঘনা নদীর তীর পুরনো ইট দিয়ে দখল করে ভাটা চালাচ্ছেন।  
ইটভাটা সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ভাটায় বছরে ৩৫-৪০ লাখ ইট তৈরি হয়। প্রতি হাজার ইট তৈরি করতে প্রায় ৮৮ ঘনফুট মাটি প্রয়োজন। সেই হিসাবে একটি ইটভাটায় বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ঘনফুট মাটি দরকার হচ্ছে। 
মালিকেরা এক হাজার ঘনফুট মাটি মাত্র ৫শত থেকে ৭শত টাকায় কৃষকের জমি থেকে কেনেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক্টর, নসিমন, করিমন করে থানা শহরের মধ্যদিয়ে মাটি পরিবহন করা হয়। এতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। আর যানজট লেগেই থাকে। মাটি পরিবহনে মানা হয়না নিয়ম কানুন। পাকা রাস্তায় মাটি পড়ে তা পথচারীদের বিড়ম্বনার সৃষ্টি করছে। নষ্ট হচ্ছে সড়ক।
এলাকার অনেকে জানান, কৃষকেরা জমির উর্বরাশক্তির ক্ষতির দিক চিন্তা না করে সাময়িক লাভের আশায় অবাধে এসব মাটি বিক্রি করছেন।
তেজখালি গ্রামের কৃষক মোকবুল হোসেন বলেন, টাকার লোভে জমির মাটি বিক্রি করি। কিন্তু মাটিকাটা জমিতে ফসলের এত বড় ক্ষতি হয়, তা আমরা জানি না।
ফরদাবাদ ইউনিয়নের ইটভাটার মালিক বলেন, ইটভাটা তৈরি করতে কিছুটা অনিয়ম করা হয়। এ ছাড়া জমি ও মাটি পাওয়া যায় না। তাই জমির মালিকদের কাছ থেকে আমরা মাটি ক্রয় করে থাকি। এবছর মাটির সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন  বলেন, কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় পুষ্টি উপাদান কমে গিয়ে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইটভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে কৃষি বিভাগ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। তবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক যদি অভিযোগ করেন আমরা ব্যবস্থা নিবো।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা প্রদান করা হবে। এছাড়াও এ বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংবাদমাধ্যম থেকে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই সেই আলোকে ইটভাটায় অভিযান চালানো হবে।

Side banner