রাজশাহীতে ছাত্রাবাসে ঢুকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে নগরীর ষষ্ঠীতলা এলাকার ‘কিউট ছাত্রাবাস’-এ ২০-২৫ জন মিলে তাকে মারধর করে বলে ভুক্তভোগী সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, হাতুড়ি ছাড়াও তাকে লাঠি ও রড দিয়ে পেটানো হয়। ঘটনার পর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নুরুল ইসলাম শহীদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) অন্যতম সমন্বয়ক। ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের লেভেল-২ এর দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে। চার বছর ধরে তিনি নগরের ষষ্ঠীতলা এলাকার ‘কিউট ছাত্রাবাস’-এ থাকেন।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে প্যারিস রোডে এ মানববন্ধন করে স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশন। মানববন্ধন থেকে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
আহত সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ জানান, রাতে তিনি তার কক্ষে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। তখন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ছাত্রাবাসে এসে প্রতিটি কক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ছাত্রাবাসে বাইরে থেকে এক ব্যক্তি এসে ঢুকে লুকিয়েছেন। ওই ব্যক্তিকেই খোঁজা হচ্ছে। তিনি বের হয়ে নিজেও খুঁজতে শুরু করেন।
“এরপর চারতলার রান্নাঘরে শামিম নামের ওই ব্যক্তিকে পাওয়া যায়। যারা শামিমকে খুঁজতে এসেছিলেন, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করার জন্য তাদেরকে ডাকছিলেন তিনি। এরইমধ্যে ছাত্রাবাসে ঢুকে পড়েন শামিমের পক্ষের ২০-২৫ জন ব্যক্তি। তারা কোনোকিছু না শুনেই আমাকে এবং ছাত্রাবাসের মালিক রোকন উদ্দীনকে মারধর শুরু করেন।”
সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদ জানান, তাকে হাতুড়ি, রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়েছে। বহিরাগত ব্যক্তিরা মারধর করে চলে যাওয়ার পর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাতুড়ি ও রডের আঘাতে হাত ভেঙে গিয়েছে বলে তিনি আশঙ্কা করেছিলেন। তবে এক্স-রে করে দেখেছেন, হাত ভাঙেনি। তাই হাসপাতাল থেকে চলে এসেছেন। এখনও শরীরে প্রচণ্ড ব্যাথা রয়েছে। পরিবার ও বড় ভাইদের সঙ্গে আলোচনার পর মামলা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মেহেদী মাসুদ বলেন, “হৃদয় ও মোস্তাক মিল্টন নামের দুই তরুণের দ্বন্দ্ব আছে প্রেমঘটিত বিষয়ে। রাতে হৃদয় ওই এলাকায় মিল্টনকে ধরে আনে। সেখানে হৃদয়ের দুলাভাই শামিমও আসেন। খবর পেয়ে মিল্টনের লোকজন তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় শামিম গিয়ে ওই ছাত্রাবাসে লুকিয়ে পড়েন।
“পরে শামিমের লোকজন তাকে উদ্ধারে ছাত্রাবাসে ঢুকে দেখেন, সমন্বয়ক নুরুলের কাছে শামিম রয়েছে। নুরুলই তাকে আটকে রেখেছেন- এই ধারণা করে তাকে মারধর করা হয়েছে। আসলে এটা ভুল বোঝাবুঝি।”
ওসি বলেন, “খবর পেয়ে আমরা সমন্বয়ক নুরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশও গিয়েছিল। নুরুল চাইলে মামলা করতে পারেন। মামলা করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নুরুল ইসলাম শহীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ মানববন্ধনের আয়োজন করে স্টুডেন্ট রাইটস অ্যাসোসিয়েশন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের ওপর সারাদেশে গুপ্ত হামলা হচ্ছে যা খুবই আশঙ্কার বিষয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে জুলাই বিপ্লবকে নসাৎ করতে তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসররা এ হামলা চালিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয় যেন দ্রুত তারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
আপনার মতামত লিখুন :