Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

রাণীনগরে জোঁক চাষে খামার গড়ার স্বপ্ন মানিক মন্ডলের


দৈনিক পরিবার | নওগাঁ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১৩, ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম রাণীনগরে জোঁক চাষে খামার গড়ার স্বপ্ন মানিক মন্ডলের

নওগাঁর রাণীনগরের মানিক মন্ডল বালতিতে স্বল্প পরিমাণে চাষ করছেন জোঁক। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় ৪০০টি জোঁক দিয়ে চাষ শুরু করেছেন। জোঁক চাষে ভাল প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছেন গ্রাম্য কবিরাজ মানিক মন্ডল।
কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে জোঁক থেকে বাচ্চা ফুটাতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং মাঠে-ঘাটে জোঁক কম পাওয়ায় বার বার সে স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে। তার পরেও হাল ছারেননি তিনি। এই জোঁক চাষে আগামীতে খুব বড় সফলতা আসবে এমনটায় আসা তার।মানিক মন্ডল উপজেলার কাশিমপুর স্কুল পাড়া গ্রামের শমসের মন্ডলের ছেলে।
এদিকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জোঁকসহ বিভিন্ন জলচর প্রাণি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তা।
মানিক মন্ডল জানান, তার বাবা শমসের মন্ডল গ্রাম্য কবিরাজ। বাবার সাথে বিভিন্ন হাটে বাজারে চলাচল করতে করতে কবিরাজী শেখা তার। কবিরাজী করতে গিয়ে তার বাবা খুব অল্প করে জোঁক পোষতেন। বাবার হাত ধরেই তার কবিরাজী এবং জোঁক পালন শেখা। মানিক মন্ডল জানান,১০/২০টি করে জোঁক লালন পালন করতে করতে বানিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তোলার স্বপ্ন জাগে। সেই থেকেই তিনি পানির বালতিতে জোঁক পালন শুরু করেন।
তিনি বলছেন, গত ১৫বছর ধরে চেষ্টা করছি বালতিতেই জোঁক থেকে বাচ্চা ফোটানোর,কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। ফলে বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্ষা মৌসুমে ধানের মাঠ,খাল-বিল এলাকার লোকজনের কাছ থেকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে জোঁক ক্রয় করেন। প্রতি কেজিতে আকার ভেদে ২৫০থেকে প্রায় ২৮০টি পরিমানে জোঁক পাওয়া যায়।
তিনি জানান, জোঁকগুলো বালতিতে রেখে এলাকার কশাইয়ের নিকট থেকে গরু/ছাগলের রক্ত কিনে নেন। এর পর বাড়ীতে এই রক্ত ঘন্টাখানেক পাত্রে রাখলে জমাট বেধে যায়। পরে জমাট ধরা রক্ত বালতিতে দিলেই চুষে চুষে খেয়ে নেয়। একবার খাবার দিলে প্রতি ১৫ থেকে ২০দিন পর পর রক্ত খাওয়াতে হয়। তবে জোঁক চাষে তেমন কোন পরিশ্রম বা বাড়তি খরচ নেই। এখানে নেই কোন ওষুধের ঝামেলা।
ফলে খুব অল্প পরিমান টাকায় কেনা জোঁক এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই প্রতিটির ওজন আসে দেড় থেকে প্রায় দুইশত গ্রাম। তিনি জানান,বিভিন্ন চিকিৎসক এবং বিউটি পার্লারের লোকজন জোঁক কিনে নেয়। একেকটি জোঁক প্রায় ৮০০থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি।
এছাড়া একেকটি জোঁক থেকে তেল তৈরি করলে বাত ব্যাথা, আঘাতজনিত ব্যাথা, মাথার চুলপড়া রোধসহ বিভিন্ন রোগের মালিশ হিসেবে প্রতিটি জোঁক থেকে পাওয়া তেল প্রায় এক হাজার থেকে ১২শত টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। মানিক মন্ডলের ভাষ্য মতে,এক কেজি জোঁক দেড় বছর লালন-পালন করতে সর্বোচ্চ ৮/১০হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
কিন্তু এই এক কেজি জোঁক দেড়-দুই বছর পর বিক্রি করলে গড়ে প্রায় দুই/আড়াই লক্ষ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। তিনি বলেন,জোঁক এবং জোঁকের তেল বিক্রি করেই চার সদস্যের পরিবার চলে তার। বর্তমানে প্লাস্টিকের দুটি বালতিতে প্রায় ৪০০টি জোঁক রয়েছে।
জোঁক চাষে তার স্ত্রী, এবং মাত্র পাঁচ বছরের কন্যা শিশুও এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু বিভিন্ন মাঠে,পুকুরে,এমনকি খালে-বিলেও বিষ প্রয়োগের অতিরিক্ত ব্যবহারে দিন দিন জোঁকের বংশ বিস্তার চরমভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ফলে চাষের জন্য কাঙ্খিত পরিমানে জোঁক পাওয়া যাচ্ছেনা।
মানিক মন্ডল জানান,তিনি গত প্রায় ১৫বছর ধরে চেষ্টা করেছেন জোঁক থেকে বাচ্ছা ফুটানোর জন্য,কিন্তু কিভাবে এটা করা হয় সে বিষয়ে প্রশিক্ষন এবং সরকারীভাবে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা না থাকায় কোন ভাবেই তা সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি বলেন, হয়তো সবাই এই কাজে আসবেনা। তবে মাছ চাষের মতো সরকারী ভাবে প্রশিক্ষন দিয়ে জোঁক চাষ করলে এখান থেকে নুন্মতম খরচে খুব বড় ধরনের লাভ হবে বলে দাবি মানিক মন্ডলের।
রাণীনগর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা সাব্বির রহমান বলেন, জোঁক চাষে প্রশিক্ষণে নওগাঁ জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন প্রকল্প আসেনি। তবে এবিষয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে চেষ্টা করে দেখা হবে।
রাণীনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র জানান, বর্তমান সময়ে কৃষির উন্নয়নে ব্যপক পরিমাণে বিষ, আগাছানাশক, কেমিক্যালের ব্যবহার এবং যান্ত্রিক হালচাষে জোঁক মারা পরছে। এছাড়া আবাসস্থল এবং পর্যাপ্ত ঘাস নষ্ট করে ফেলায় জোঁকের বংশ বিস্তার হচ্ছেনা।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিকভাবেই এক প্রাণি আরেক প্রাণির উপর নির্ভরশীল। সুতরাংশ জোঁকের প্রজনন হ্রাস পেলে প্রকৃতির উপর চরম প্রভাব পরবে।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মাছের যেমন প্রজনন ঘটিয়ে বিভিন্ন হ্যাচারীতে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবস্থা রয়েছে ঠিক তেমনি জোঁকের বাচ্চা ফোটানোর এমন ব্যবস্থা নেই। ফলে এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিকভাবেই জোঁক বংশ বিস্তার করে আসছে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় জোঁকসহ বিভিন্ন জলচর প্রাণি রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

Side banner