গাইবান্ধা সদর উপজেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রের দক্ষিণ ফলিয়া নামক এলাকায় বাবার বাড়িতে বসবাস। স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে দিশা আকতার (তমা) জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা এক নারীর নাম।
অভাব অনটনের সংসার অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও অভাবের কারণে লেখাপড়া আর হয়ে উঠেনি।
চার দেয়ালের গণ্ডির মধ্যে যার নিরিবিলি জীবনযাপন করার কথা, তিনি দিনের পর দিন কৃষি জমিতে কাজ করছেন। রীতিমতো তিনি একজন নারী হয়ে কৃষিতে পরিশ্রম করে সাফল্যের শিকরে পৌঁছেছেন।
উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি ইতোমধ্যেই কৃষি কাজে এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছেন। সংসারের পুরো দায়িত্ব পালন করছেন দিশা আকতার (তমা) নামে এই উদ্যোমী নারী।
জানা যায়, অস্বচ্ছল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বিয়েও হয় অস্বচ্ছল পরিবারেই। পরিবারে রোজকারের লোক না থাকায় স্বামীর বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি। মা মোছা. হাসনা হেনা একা হওয়ায় দায়িত্বভার পরে নিজ কাঁধেই। সেই থেকেই স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে দুই বাচ্চা নিয়ে জীবন যুদ্ধে নেমে পড়েন দিশা আকতার (তমা) নামের এই নারী।
কোন কিছু না ভেবে নিজেই কিছু করতে চেয়েছেন সব সময়ই। এরপর থেকেই কৃষি কাজ থেকে কোন কিছু করা যায় কি না সেই ভাবনা।
তিনি প্রতিবেদকের কাছে জানায়, এমন সময় মাথায় আসে বাবার গ্রামে কিছু জায়গা জমি আছে। একটি অংশে একটি সবজির বাগান করলে কেমন হয়। নিজের ইচ্ছের কথাটা স্বামী শরিফুল ইসলামের কাছে তুলে ধরেন দিশা আকতার (তমা)।
স্বামীর উৎসাহ পেয়ে বোয়ালীয়া ইউনিয়নের ০২ নং ওয়ার্ডের মরহুম তোজাম্মেল হকের মেয়ে দিশা আকতার (তমা) তার নিজের জমিতে শুরু করেন বিভিন্ন প্রকারের সবজির আবাদ। তার মধ্যে শিম, ফুলকপি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো। এর পাশাপাশি চলছে নিবিড় সবজি চাষ। প্রথম অবস্থায় সবজি খাত থেকে বাজিমাত করেন।
এরপর ইউটিউব দেখে ২০২৪ সালে প্রথম আদা চাষ করে ১৪ শত বস্তায়। খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা। সব কিছু বাদ দিয়ে লাভের আসা দেখছেন ১ লাখ টাকার উপরে। একই সাথে গাভীর খামারের পরিকল্পনা করছেন এই নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ১০০ শতাংশ জমিতে চলছে সবজির আবাদ।
এলাকায় কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখায় আশেপাশে সবাই উদ্বুদ্ধ হয়ে কৃষি শাকসবজি ফসলি জমি বাড়ছে। একইসাথে তিনি বীজ উৎপাদন করতে চান এই উদ্যোমী নারী।
বোয়ালী ইউনিয়নের বোয়ালীয়া ২ নং ওয়ার্ডের কৃষি ক্ষেত্রে একজন সফল নারী দিশা আকতার (তমা) মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে সবজি চাষ শুরু করেন। এখন প্রতি বছর সবজি চাষে ২ লাখের উপরে আয় করেন দিশা আকতার (তমা)। ২০২১ সালে শুরু করেন ২০ হাজার টাকা দিয়ে। এখন তার বেনিফিট দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা পুঁজি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন বলেন, দিশা আকতার (তমা) পরিশ্রমী, ধৈর্য, অধ্যবসায়, সাহস ও মেধাকে কাজে লাগিয়ে সংগ্রাম করে সাহসিকতার মধ্য দিয়ে কৃষিতে তিনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা ও খামারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে তাকে আমরা যতটা সম্ভব প্রনোদনা ও বিজসহ সব সহযোগিতা করছি ভবিষ্যতে আরও করা হবে ।
আপনার মতামত লিখুন :