শিশির ভেজা প্রকৃতি জানান দিচ্ছে হেমন্ত পেরিয়ে শীত আসছে। মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। শুরু হয়েছে সোনালী ধান কাটা, আবার কেউবা ঘরে তুলছেন আগাম ধান। তবুও নেই গ্রামীণ সংস্কৃতির নবান্ন উৎসবের আমেজ। গ্রামবাংলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। অতীতে নবান্নে সোনালী ধান কাটার উৎসবে মুখরিত হতো গ্রামের প্রতিটি আঙিনা। কিন্তু গ্রামীণ জনজীবনে যেন এই চিত্র এখন শুধুই স্মৃতি।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এ সোনালী ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন আমন চাষীরা। প্রতিবছর হেমন্ত ঋতুতে নতুন বার্তা নিয়ে আসে আমন ধান। মাঠে মাঠে ছড়াচ্ছে নতুন ধানের গন্ধ। কৃষকের উৎপাদিত সোনালী ধানের সোনালী দিন চলছে। কিন্তু আমেজ নেই নবান্নের। একটা সময় এই উৎসবকে ঘিরে বাঙালির ঘরে ঘরে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরি হতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রামবাংলার শিশুরা বইপুস্তক কিংবা গল্পেই শুনে থাকে নবান্নের কথা। একসময় অগ্রহায়ণ মাস এলেই পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে গ্রামবাংলায় জানান দিত নবান্নের কথা। তবে এখন আর তেমন উৎসব চোখে পড়ে না গ্রামীণ জনপদে।
নবান্ন উৎসবে সকলের ঘরে ঘরে নতুন আমন ধানের চালের বাহারি পিঠা,ফিরনি-পায়েস,ক্ষীরসহ নানা আয়োজন দেখা যেত এবং আত্মীয়স্বজন,পাড়া-প্রতিবেশীকে বাড়িতে ডেকে বসিয়ে খাওয়ানো হতো।
নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আনিসুর রহমান বলেন, দাদা-দাদির কাছে নবান্ন উৎসবের কথা শুনেছি। আগে অনেক ভালো হতো। নবান্নের দিনে একে অপরের বাসায় খেতে যেত। কিন্তু বর্তমানে আমাদের গ্রামে সেটা আর দেখি না। নিজেরাই নিজের মতো এখন নবান্ন উৎসব পালন করে।
নবাবগঞ্জ কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, হেমন্তের ধান কাটা শুরু হলেই আমার মনে ভেসে ওঠে নবান্ন উৎসবের আমেজ। কিন্তু বর্তমানে সেটা আর গ্রাম বাংলায় দেখা যায় না। আমরা ছোটবেলায় দল বেঁধে একে অপরের বাসায় খেতাম এবং নবান্ন উৎসবকে নতুনভাবেই বরণ করে নিতাম। কিন্তু এখনকার ছেলে-মেয়েরা শুধু নামেই জানে নবান্ন উৎসব। আগের মতো তারা আর নবান্ন উৎসব করতে পারে না।
কৃষকদের অনেকেই বলছেন,অভাবে স্বভাব নষ্ট, কুল নষ্ট ভজনে। আগে জিনিসপত্রের দাম কম ছিল, নবান্ন উৎসব করা সম্ভব হতো। এখন সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় আর করা সম্ভব হয় না। একারণে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসেছে।
আপনার মতামত লিখুন :