গাইবান্ধা সদর উপজেলার আমন ধান কাটাই-মাড়াই শেষ না হতেই তীব্র শীত আর শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করে বোরো চাষাবাদের প্রস্তুতি হিসেবে বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধা জেলার কৃষকরা।
রবিবার (১ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ না হতেই এলাকার কৃষকরা কোমর বেধে নেমে পড়েছেন ইরি-বোরো চাষের দিকে। কৃষকরা ইরি-বোরো চাষের প্রথম পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বীজতলা তৈরি নিয়ে। তবে ইরি-বোরো চাষের জমিতে কেউ কেউ সরিষা চাষ করছেন। বীজতলা তৈরি শেষ হওয়ার পরপরই সরিষা উঠে আসবে। তখন একই জমিতে ইরি-বোরো বীজ রোপণ করবেন চাষিরা। ঘন কুয়াশা আর শৈত্যপ্রবাহকে উপেক্ষা করে দল বেঁধে বীজতলা পরিচর্যাসহ বোরো ক্ষেত তৈরিতে কাজ করছেন বাংলার সোনালী ফসল ফলানো কৃষক।
গাইবান্ধা জেলার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, ইতিমধ্যেই গাইবান্ধা জেলায় সরকারের দেওয়া কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে গাইবান্ধা জেলায় কোন আবাদী জমি যেন পতিত না থাকে। আবার এ নির্দেশনাও প্রদান করা হয়েছে আগাম আমন ধান কাটার পরে তেলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরিষার চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।ভুট্টা মরিচ আলু চাষ পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। গাইবান্ধার প্রত্যেকটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে ও কৃষি বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই নির্বাহী অফিসার ও কৃষি বিভাগ তা বাস্তবায়নে ফলপ্রসূ ভূমিকা পালন করছে। গাইবান্ধায় কত হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে এ ব্যাপারে বারবার ফোন করা হলেও জেলার কৃষি কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোঃ খোরশেদ আলমকে ০১৭১১-৩২৮২২৪ নাম্বারে ফোন করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে তথ্য চাইলেও তিনি তথ্য প্রদান করেননি।
সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের বোরো চাষি আতোয়ার হোসেন বাবলু মিয়া বলেন, প্রচন্ড শীত ও অতিরিক্ত কুয়াশা পরার আগেই বীজ বপন করলে বীজতলায় বেশি চারা গজায় এবং রোগ-বালাই মুক্তভাবে সুস্থভাবে চারা বেড়ে ওঠে। এতে বীজতলার ক্ষতি কম হওয়াসহ অল্প বীজে অধিক জমিতে চারা রোপণ করা যায়। এ কারণে আগেভাগেই বীজতলা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছি।
গাইবান্ধা জেলার অনেক কৃষক আমন ধান কাটাই-মাড়াই শেষ করেই ইরি-বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বীজতলার চারা গাছ হৃষ্টপুষ্ট হয়ে সবুজে ভরে উঠবে বীজতলা।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিজা আক্তার বলেন, চলতি ইরি-বোরো চাষ মৌসুমে উপজেলার প্রতিটি এলাকায় বীজতলা তৈরি এবং বোরো আবাদের জমি তৈরি কাজ চলছে। বীজতলার বীজের চারাগাছ যাতে সুস্থ ও সবলসহ ভালো হয় সেজন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শসহ সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। গাইবান্ধার প্রত্যেক এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষভাবে এ বিষয়ে কাজ করছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লিজা আরো বলেন এবার আগাম বন্যা হওয়ায় গাইবান্ধা সদর উপজেলায় সহ গাইবান্ধা জেলায় বাম্পার আমন ধানের ফলন হয়েছে। অনেকেই আগাম আমন ধান কেটে সেখানে ভুট্টা মরিচ ও সরিষা সহ আলুর বীজ রোপন করেছেন। কৃষক আর এখন শুধু কৃষি অফিস নির্ভর নয় অনেক অভিজ্ঞ কৃষক আছেন যারা একই জমিতে কয়েকটি ফসল উৎপাদন করা যায় সে ব্যাপারে অনেকটাই সচেতন। অনেকেই আমন ধান কাটা মাড়ি শেষ না হতেই বোরো ধানের বীজ তলায় বীজ রোপণ করছেন।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদ আল হাসান জানান সরকার ইতিমধ্যে প্রান্তিক কৃষকদের অনেকের মাঝে প্রণোদনা হিসাবে সরিষার বীজ, সার ও ধানের বীজ প্রদান করেছে। যার ফলে যে কৃষকগুলো বর্গা চাষী আছেন তারাও সরকারের প্রণোদনা পেয়ে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিতক্ত এবং আমন ধান কাটার পরে সরিষার বীজ বপন করেছেন।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ স্যার আমাদের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। গাইবান্ধার কোন আবাদী জমি যেন পড়ে না থাকে। সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক দৃষ্টি প্রদান করছি। আশা রাখি গাইবান্ধা জেলায় কোন আবাদি জমি পড়ে থাকবে না বরং যেগুলো পরিতক্ত জমি আছে সেগুলো কৃষককে উদ্বুদ্ধ করে কৃষি খাতে ব্যবহার করার জন্য যথেষ্ট পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :