উত্তরবঙ্গে কৃষি মৌসুমে অন্যতম অর্থকারী ফসল আলু। মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা যখন জমি প্রস্তুত করে আলুর বীজের লাগানোর অপেক্ষায় করেছেন। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা শক্তিশালী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন বাজার ব্যবস্থা। কৃষকরা ভুগছেন অতিরিক্ত দামে বীজ কেনায়। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৈরি করে সংঙ্কট। বিভিন্ন অযুহাতে নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতি বস্তায় 'এ'গ্রেডের বীজ আলু প্রায় ১২০০- ১৪০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। দোকানের সামনে স্বল্প কিছু বস্তা রেখে উক্ত দামে কেউ প্রকাশ্যে কেউ গোপনে বিক্রি করছেন।
বেশী ভাগই আলুর বীজ ব্যবসায়ীদের দোকান ও গুদামে আলুর বীজ নেই। ভিন্ন কোন জায়গা থেকে তারা সরবরাহ করছেন বলে কৃষকের ধারণা।
রবিবার (১৭ নভেম্বর) কুড়িগ্রাম জেলা সদর কাঁঠালবাড়ি বাজারে কৃষকদের অভিযোগ ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিকাল ৫ টায় কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ বদরুজ্জামান রিশাদ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে এসে বাবু ট্রেডার্সে বিআরডিসি নির্ধারিত দামের অতিরিক্ত বিক্রয় করা সততা পান।
এছাড়াও সার-বীজও কীটনাশক বিক্রয়ের ভাউচার সংরক্ষণ না করা, মেয়াদ উত্তীর্ণ কীটনাশক রাখায় কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-(১৯)১খ ধারা ১০হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং সতর্ক করে দেন।
এসময় উপস্থিত উৎসুক কৃষক দোকান ঘিরে রাখে এবং ন্যায্য মূল্যে বীজ ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় তাৎক্ষণিক বিক্রয় নির্দেশ দিয়ে চলে যাওয়ার পরপর তারা বীজ বিক্রি না করে দোকানে শাটার বন্ধ করে দিয়ে তাৎক্ষণিক শটকে পড়েন। কিছুক্ষণ পর দোকানে আসলে ক্রেতারা আলুর বীজ ক্রয় করতে চাইলে ম্যানেজার রয়েল বলেন, আমাদের বীজ সব বিক্রি করা হয়েছে।
কৃষক লিটু মিয়া বলেন, আলু রোপণ করার জন্য জমি প্রস্তুত করে রেখেছি, কয়েকদিন থেকে আলুর বীজ ক্রয় করার চেষ্টা করছি কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে বীজ ক্রয় করতে পারছি না। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কেনার চেষ্টা করলাম কিন্তু তারা বিক্রয় না করে শাটার বন্ধ করে চলে যান। আমরা সাধারণ কৃষক কার কাছে আমরা যাব।
চলতি মৌসুমে আলুর বীজের অভাবে আলু চাষ করতে পারবো কি না তানিয়ে শঙ্কায় আছি। এছাড়াও কিছু কিছু চাষী জমি কন্টাক্ট নিলেও বীজ সংকটের কারণে তারা জমি ফেরত দিচ্ছেন বলে মত প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বীজ সংকটে সম্পর্কে সাবেক কাঁঠারবাড়ী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মোঃ মামুনুর রশিদ বলেন অধিকাংশ ডিলার আওয়ামী লীগের লোকজন তাই বাজার অস্থিশীল করার জন্য পায়তারা করছে। ডিলারদের এমন কর্মকাণ্ড ঘৃণিত এবং নিন্দনীয়।
কুড়িগ্রাম বীজ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আজাদ আলী বলেন, অ্যাসোসিয়েশন শুধু মাত্র ডিলারদের কোন সংকটে পড়লে আমরা সেখান থেকে উদ্ধার করি এবং দুঃস্থ পরিবাদেরকে সহযোগিতা করে থাকি। বাজারে মূল্য নির্ধারণ করা আমাদের কোন কাজ নয়। সরকারের নির্ধারিত দামের বেশি কখনোই বিক্রি করতে পারবে না। কেউ অধিক মুনাফা লাভের আশায় কোন আইনি জটিলতার মধ্যে পড়লে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করব না।
এ সম্পর্কে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছাঃ নাহিদা আফরিন বলেন, কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে বীজ সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য আমাদের প্রশাসন সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জেলা বীজ প্রত্যয়ন অথরিটি শামসুজ্জামান বলেন, আমরা বিভিন্ন কোলেস্টোরেজ এবং অন্যান্য বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে তদারকি করছি এবং তথ্য নিচ্ছে এতে বলা যায় এবারের জেলায় কোন রকম বীজের সংকট হবে না। সরকারি দাম ব্যতীত যারা অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে তাদেরকে আইনে আওতায় নিয়ে এসে ডিলারশিপ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সবে মাত্র আলু চাষের মৌসম শুরু হয়েছে এই মুহূর্তে আমাদের কোন আলুর বীজ সংকট নেই। এ ধরনের কোন অভিযোগ আসলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আপনার মতামত লিখুন :