গাইবান্ধা জেলায় শীতের আগমনী বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামের মেঠো পথে। ভোরের সকাল কুয়াশার সাদা চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পথঘাট। কুয়াশার শিশির জমছে আমনের ধানের ডগায়। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ। ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে এক দেশ সকল দেশের সেরা। সে যে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ।
জীবন বৈচিত্রের আধুনিক সভ্যতায় কিছুটা পরিবর্তন আসলেও একসময় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কার্তিক মাসের দিনে আমাদের বাংলার মানুষের কপালে দুঃখ কান্না কম জোটেনি। কার্তিক মানেই আমরা জেনেছিলাম মঙ্গা আর দারিদ্রতা। দিন আনা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে কার্তিকের আগমনের মধ্যে নতুন কোন তাৎপর্য বয়ে নিয়ে আসে না। তবু প্রকৃতির পালাবদলে সে বারবার ফিরে আসে। শেষ হচ্ছে সেই কার্তিক। শুরু হচ্ছে অগ্রহায়ণ।
এতো কিছুর পরও কার্তিকের ললাটে দুর্ভোগ জুটেছে ঢের। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে প্রতিবছর আসে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে। কুয়াশার আবরণের ফাঁকে সোনালী সোপানের আভাস দেয় কার্তিক। হেমন্তের পাকা ধান নবান্নের উৎসব ফিরিয়ে আনে অভাবীদের ঘরে। ‘দুঃখের পরে সুখ আসে’ প্রবাদের বড় প্রমাণ হেমন্ত।
কার্তিকের পরেই সমৃদ্ধির অগ্রহায়ণ। হেমন্তের তখন এক অন্য রূপ। মাঠে মাঠে বাতাসে দোল খায় সোনালী ধানের ছড়া। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ‘ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে কী দেখেছি আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।’
জেগে উঠে নতুন কর্মোদ্দীপনা। ফসল কাটার ব্যস্ততা। ধানের আটি নিয়ে পথ চলার দৃশ্য। কৃষকের আঙিনায় নতুন খড়ের গাদা। তাপ মাত্রা দ্রুত কমতে থাকে। বাতাসে গা শির শির করে শুরু হয় শীত। গ্রামে গ্রামে খেজুর রস গুড়ের পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম পড়ে। সকালে ভাপা পিঠা না হলে যেন চলে না সব বয়সের মানুষের কাছে। শীতের আগমনে সবজি উৎপাদন বাড়ে কমে আসে সব সবজির দাম বিশেষ করে অন্যতম হচ্ছে লাউ ফুলকপি বাঁধাকপি সব ধরনের শাকসবজি।
এসময় আবার বেড়ে যায় রোগের প্রাদুর্ভাব। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়ায় বিপৎজনক হয়ে ওঠে সড়কপথ। বাংলাদেশে শীতের প্রকোপ বেশি হয় উত্তরের জেলাগুলোতে। আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়’ এবছরও তার ব্যতিক্রম হবে না। সবকিছুর মাঝেও শীত অনাবিল আনন্দ আর উপভোগের হয়ে ওঠে সবসময়ই। তাইতো কবি সুকান্ত বলেছেন, “হে সূর্য তুমি আমাদের স্যাঁত স্যাঁতে ভিজে ঘরে, উত্তাপ আর আলো দিও আরো আলো দিও, রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।”
কয়েকদিন থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় বাতাসের তাপমাত্রা কমে আসায় সকালের দিকে শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর রাতের দিকে গরম কাপড় গায়ে জড়াতে হচ্ছে উত্তরের জেলার মানুষগুলোকে । ঋতু পরিবর্তনের কারণে এতে করে সর্দি, কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে বৃদ্ধদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে সর্দি জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ঋতু বৈচিত্র্যের কারণে এ জনপদের প্রকৃতিতে আগাম শীতের আগমন ঘটেছে।
রবিবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘুম থেকে উঠেই দেখি কুয়াশার চাদরে ঢেকে গিয়েছে সবকিছু। ছেলেমেয়েরা দৌড়াচ্ছে ভাপা পিঠা খাওয়ার জন্য। চতুর্দিকে কুয়াশা আচ্ছন্ন। ধানের ডগায় দেখা মিলছে মাকড়সার জালের উপর কুয়াশার পানিতে ঝলমলে শিশির বিন্দুর ছোঁয়া। শীতের কুয়াশা যেন মানুষের চোখে এখন সাদা মেঘের ধোঁয়া।
আপনার মতামত লিখুন :