Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

মেহেরপুরে তামাক চাষীদের নিরব কান্না


দৈনিক পরিবার | মাহাবুল ইসলাম এপ্রিল ২৮, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম মেহেরপুরে তামাক চাষীদের নিরব কান্না

মেহেরপুরে সরকারি ভাবে তামাক চাষে নিরুৎসাহিত না করা বা অন্য কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় তামাক চাষ করে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে অধিকাংশ কৃষক পরিবারের সদস্যরা। তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রলোভনের ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার কৃষক তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছে। যে জমির বাৎসরিক লিজ ছিল ৬/৭ হাজার টাকা তা তামাক চাষের জন্য অনেক গরিব কৃষক ২৫/৩০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে তামাক চাষ করছেন। 
সার, সেচ, কীটনাশক, তামাক ভাঙা, পরিবহন, জ্বালানী, খড়িসহ ইত্যাদি খাতে খরচ হচ্ছে বিঘা প্রতি জমিতে ৭০/৯০ হাজার টাকা। খরচ বাদে বিক্রি করে কত টাকায় বা তারা লাভবান হচ্ছেন এটাই ভাবার বিষয়। তামাক উৎপাদন করে তা বিক্রির উপযুক্ত হলেও নেই ক্রেতা। তামাক কোম্পানিগুলো কৃষক অপেক্ষা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেই বেশি তামাক ক্রয় করছেন এমন অভিযোগও কম নয়। কৃষক তামাক চাষ করে সর্বস্ব হারাচ্ছে আর লাভবান হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তামাক  পুড়িয়ে ২/১ বার বিক্রির পর চাষে কতটাকা খরচ হয়েছে আর বাকী তামাক বিক্রি করে কতটাকা মুনাফা হবে তা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন কৃষক। গতবছর ১ ঘর তামাক (২৫০ বাতা) ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হলেও এবার ৪৫ হাজারে নেওয়ার লোক নেই।
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় তামাক চাষ হলেও গাংনী উপজেলার ধর্ম চাকী, ভোমরদহ, হিজলবাড়ীয়া, ভরাট, দুর্লভপুর, মাইলমারী, লক্ষীনারায়ণপুর, হিন্দা, পলাশীপাড়া, করমদী, তেঁতুলবাড়ীয়া, রংমহল, খাসমহল, রামকৃষ্ণপুর, কাথুলী, কালিগাংনী, নওপাড়া, গোভীপুর, খড়মপুরসহ বৃহত্তর ধলার মাঠে বেশি চাষ হয়ে থাকে। যা নিয়ে কৃষকদের ভাবনার অন্ত: নেই। রমাদানের প্রথম থেকে মাঠের তামাক ভাঙা ও পুড়ানো শুরু হলেও শেষ সময়ে তামাক পুড়ানোর ধুমধাম চলছে। তিনি তামাক চাষ করেছেন তার পরিবারের স্ত্রী ও শিশু সন্তান পর্যন্ত তামাকের কাজে কঠোর শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি শ্রম চলমান থাকে। আর কল্যাণপুর, হাড়াভাঙা, বেলতলাপাড়া ও তেঁতুলবাড়ীয়াসহ যেসব এলাকায় কাজ কম তারাও ছুটে এসেছে এসব এলাকায় কাজ করতে। নেই কোন পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট। যত্রতত্রভাবে তামাকের ঘর নির্মাণের ফলে একটি ঘরে আগুন লেগে ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্য তামাকের ঘরে। ভস্মীভূত হয়ে হারাচ্ছে সর্বস্ব। পরবর্তী চাষাবাদ কিভাবে করবে তা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাজ। আর দেকানে সার, কীটনাশকের দেনা পরিশোধ নিয়েও রয়েছে মহা চিন্তায়।
এমতবস্থায় অনেকেই আগামীতে তামাক চাষ করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। যদিও কৃষকরা এমন কথা বলে থাকলেও পরবর্তী বছর এলেও আবারও ধড়ি বেঁধে লেগে পড়েন তামাক চাষে।
কৃষক ইনারুল, শরিফুল, আইনাল, শরিফ, সুমনসহ বেশ কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তিনারা জানান, এবছরে পেঁয়াজ, কপি, আলুসহ প্রতিটা আবাদে লোকসান গুনতে হয়েছে। বিগত বছরগুলোতেও অধিকাংশ ফসলে তামাকের মতো লাভ হয়নি। তাছাড়া দেখাদেখি চাষ (পাশাপাশি) আবাদ থাকায় সকলেই ঝুঁকছে তামাক চাষে। ১০ বছর পূর্বেও মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার প্রতিটা গ্রামের অসংখ্য জমিতে ধান,গম, মশুর, সরিষা, খেসারীসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হলেও এখন তা তামাকের দখলে।
কৃষি বিভাগ থেকেও মাঝে মধ্যে দু’একটি অবহিতকরণ সভা করেই দায়িত্ব শেষ। রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা তামাক মুক্ত দিবস এলেও শুধুমাত্র সেদিনের আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। 
কেউ কেউ বলছেন তামাক থেকে সরকার বিপুল পরিমাণে রাজস্ব পাওয়ায় তা চাষ বন্ধে তেমন একটা উদ্যোগ নেই।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে বেশ কয়েকটি এলাকায় অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া মাঠ দিবসেও তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে বিভিন্ন ধরনের লাভজনক ফসল অল্প অল্প করে ফলানোর বিষয়েও আলোচনা করা হয়। কিন্তু কৃষকরা পাগলের মতো তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রলোভনে পড়ে তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছে।

Side banner