ধানই ছিল চাষিদের ধ্যানজ্ঞান। একটা সময় নওগাঁ চেনা ছিল ধানের স্বর্ণভূমি হিসেবে। তবে গত কয়েক বছরে ব্যবধানে মুহূর্তেই বদল বরেন্দ্রর এই চেনা মঞ্চ। চাষিদের আবাদের নেশার ওপর ভর করে আম বিপ্লবের পালে বদলে গেছে নওগাঁর সেই চিত্র। গত বছরের চেয়ে চলতি বছর গাছে গাছে মুকুল বেশি আসায় সেই মুকুলের সমারোহে স্বপ্ন বুনছেন চাষিরা। মৌসুমের শুরুতেই কুয়াশা থাকলেও এখন প্রকৃতি বেশ অনুকূলে। এতে বসন্তের বাতাসে আমের মুকুলের ঘ্রাণে চাঙ্গা হয়ে উঠছে চাষিদের মন।
আম চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর আবহাওয়া এখন পর্যন্ত আম চাষের অনুকূলে রয়েছে। মুকুল আসার শুরু থেকেই চাষিরা বাড়তি যত্ন শুরু করেছেন। গাছে গাছে যে পরিমাণ মুকুল দেখা যাচ্ছে, তা টিকে থাকলে আমের ফলন ভালো হবে। আবার আমের আগাম দামও পাওয়া যাবে। গত বছরে জেলায় আমের ফলন কম হওয়ায় এবার আশানুরূপ ফলনের আশায় বুক বেধেছেন তারা। তবে গাছে মুকুল প্রচুর আসলেও সার-কিটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে বাগান পরিচর্যার খরচ।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলায় এ বছর ৩০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার টন। গত বছর জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল, যা থেকে উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার টন। এবার ২০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ২৫ হাজার টন ফলন বাড়তে পারে আশা করা হচ্ছে। নওগাঁর ১১টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম চাষ হয় সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলায়।
জেলার বিভিন্ন আম বাগান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আমের মুকুলের মো মো ঘ্রাণ ছড়াচ্ছে নওগাঁর আম বাগানগুলো থেকে। মুকুলের সোনালী রঙ নজর কাড়ছে সবার। কিছু কিছু গাছে আমের গুঁটি দেখা যাচ্ছে। এক মুকুল থেকে আরেক মুকুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌমাছির দল। এ বছর প্রায় সব আম গাছেই প্রচুর পরিমাণে মুকুল। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে বেশি মুকুল এসেছে। ভরা আমের মুকুলে ভালো ফলনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় চাষিরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। চাষিরা গাছের গোড়ায় পানি দেওয়া, পানি ছিটানো, স্প্রে করাসহ মুকুল আটকাতে সব ধরনের যত্ন নেওয়ায় ব্যস্ত।
সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকার আম বাগান মালিক নাজমুল হাসান বলেন, পাঁচ বিঘা জমিতে আম চাষ করেছি। গত বছরের চেয়ে এবছর বাগানের সবগাছে মুকুল বেশি আসছে। এই সময়ে গাছে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা ও মুকুল ভালো থাকার জন্য কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। এছাড়া গাছের গোড়ায় গর্ত করে সেখানে সার দেওয়া। আবহওয়া শেষ পর্যন্ত ভালো থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
একই উপজেলার চাচাহার এলাকার ফিরোজ হোসেন বলেন, গত বছর শীত ও কুয়াশার কারণে মুকুল কম আসছিল। ফলনও কম হয়েছিল। এবার মুকুল আসার প্রায় দুই মাস আগে থেকেই আমরা ছত্রাকনাশক দেওয়া শুরু করি। এতে সময়মতো মুকুল আসতে শুরু করে। এখন অনেক গাছে গুটি আসতে শুরু করেছে। এবার বড় ধরনের প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না হলে গতবারের লোকসানটা পুষিয়ে নিতে পারব।
আলামিন ইসলাম বলেন, এবার আবহাওয়া ভালো। শীত ও কুয়াশা কম ছিল। অনেক সময় কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়। কিন্তু এ বছর সেই ঝুঁকি ছিল না। তাই গাছে ভালো মুকুল এসেছে। প্রতিটি গাছেই ৯০ ভাগ মুকুল এসেছে। তবে বাগান পরিচর্যার প্রধান উপকরণ সার-কিটনাশকের দাম বেশি এবছর। তারপর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ববেলেন, এবছর প্রতিটি গাছে ব্যাপক মুকুলের সমারহ ঘটেছে। প্রায় শতভাগ গাছে মুকুল আসা শেষ হয়েছ। ইতোমধ্যে গাছে গুটি আসা শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় কৃষকদের সেচ নিশ্চিত করনসহ কি ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে হবে তা মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এবার আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত ভালো থাকলে রেকর্ড পরিমাণ আম উৎপাদন হবে।
আপনার মতামত লিখুন :