Daily Poribar
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

গাইবান্ধায় সজিনা ফুলে প্রকৃতি সেজেছে আপন মহিমায় 


দৈনিক পরিবার | শাহিন নুরী  ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫, ০৯:৫৭ পিএম গাইবান্ধায় সজিনা ফুলে প্রকৃতি সেজেছে আপন মহিমায় 

বাংলাদেশের প্রকৃতিতে ছয় ঋতুর রাজ বলা হয় বসন্তকালকে। ১৪  ফেব্রুয়ারি  ২০২৫  বাংলার ঋতুতে  বসন্তকালের পহেলা ফাল্গুন। নানান আয়োজনে  বসন্তকে বরণ করতে  বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার মানুষ নানাভাবে আয়োজন করে থাকে দিনটিকে ঘিরে। ঋতুর রাজা বলা হয় বসন্তকালকে বসন্তকালের প্রকৃতিতে নানান ফুল দেখা যায়। অন্যতম অনেকগুলো ফুল থাকলেও অনেকের চোখে পড়ে সজিনার ফুল। নানাভাবে আকর্ষণ না করলেও সজিনা ফুল থেকে সজিনা হওয়ায় মানুষের আগ্রহ কম থাকে এই সাদা ফুলে। নানা রঙ্গের ফুলের সমারোহে ফুলের দোকানে শোভা না পেলেও প্রাকৃতিক সোন্দর্য নিয়ে সাদা ফুলের বর্ণিল সাজে সেজেছে গাইবান্ধা সদর  উপজেলার সজিনা গাছগুলো। শুধু কি গাইবান্ধার সদর উপজেলা। বাংলাদেশের প্রকৃতির প্রত্যেকটি জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম শহরের সজিনা গাছগুলো সেজেছে সাধা ফুলের সমারোহে। প্রকৃতি সেজেছে যেন তাঁর আপন মহিমায়। ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এ বাংলাদেশ। সুজলা সুফলা, শস্য শ্যামল ভরা আমাদের এ বাংলাদেশের একেকটি ঋতুর একেক রুপে ও রঙ নিয়ে হাজির হয়। ঠিক তেমনি গাইবান্ধা জেলার সদর  উপজেলার বাড়ির আনাচে-কানাচে ও  রাস্তার পাশে থাকা সজিনার গাছগুলো থোকায় থোকায় সাদা সাদা ফুলে ভরে উঠেছে। মৌ মৌ করছে চারিপাশ। সজিনা গাছের ডালের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফুল আর ফুল। এ সময় সজিনা গাছের পাতা ঝরে পড়ে। তাই পাতা শুন্য ডালে থোকা থোকা সাদা ফুলের শোভা দেখে সকলেই  বিমোহিত হন।
সজিনা বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ। অলৌকিক গাছ হিসেবে সজিনা পরিচিত। ইংরেজিতে সজিনার নাম ‘ড্রামস্ট্রিক’ যার অর্থ ঢোলের লাঠি। নামটি অদ্ভুত হলেও এটি অতিপ্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী সবজি জাতীয় একটি উদ্ভিদ। এই সজিনা গাছ থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হন বাড়ির গৃহিনীরা। তারা সজিনা মৌসুমে সজিনা বিক্রি করে হাতের খরচ হিসেবে অর্থ সঞ্চয় করেন।
এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টিগুন অনেক বেশি। এ গাছের অনেক গুন থাকায়, এ গাছকে যাদুর গাছও বলা হয়। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভর্ত্তা করে ও বড়া ভেজে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। ফল সবজির মতো রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়।
এসব গাছ বাড়ির পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো হয়। গাছে ফলনও বেশি হয়। যত্ন ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে উঠে। বাংলাদেশে ২টি জাত আছে সজিনা ও আইখঞ্জন। সজিনার ফুল আসে জানুয়ারীতে আর আইখঞ্জন এর ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় সর্বাধিক ১৫০টি মত ফুল ধরে। ফুল ৪০ সেমি. থেকে ৮০ সেমি. পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফুটার ২মাস পর ফল তোলা যায়। একটি বড় গাছে২০০০ থেকে ৩০০০ ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০টি বীজ হয়। দেশে সাধারণ ডাল কেটে ডাল রোপন করলে সজিনা গাছ তৈরি হয়। সজিনা চাষিরা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় সজনের ডাল রোপন করতে উৎসাহিত হয়। বসতবাড়ির আশে পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজিনা গাছ যত্ন ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজিনা পুষ্টি ও ভেজষ গুন সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। সজিনার ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই সবজিটি বাজারে মৌসুমের শুরুর দিকে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়।
অলৌকিক গাছ সজিনা গাছ। ঠান্ডা-গরম, লবণ, খরা সহিষ্ণু পরিবেশে এই গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই জন্ম নেয়। এ উপজেলার মাটিতে সজিনা আবাদ ভাল হচ্ছে। উপজেলার প্রতি বাড়িতে কমবেশি ৫/৬টি করে সজিনা গাছ আছে। এ বছর সজিনা গাছে ব্যাপক ফুল ধরেছে। বড় ধরণের দূর্যোগ না হলে সজিনার বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলে উৎপাদিত সজিনা ঢাকাসহ পুরো দেশে চালান হয়। দিন দিন পরিত্যক্ত জায়গায় সজিনা গাছ তৈরির আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই উপজেলায় সজিনা গাছের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষকরা সজনের উচ্চ মূল্য পাওয়ায় তারা লাভবানও হচ্ছে। ঋতুবদলের বসন্তের এ সময়টাতে নানা রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচতে খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। পুষ্টিবিদরা এ সময় তেঁতো, ফল, শাকের মতো খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় রাখার পরামর্শ দেন।
এই ফুলে আছে ওষুধি গুণ যা ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। বিশেষ করে ঠান্ডা লেগে বুক জ্বালা পোড়ার সংক্রমণ হলে সজনে ফুল খেলে উপকার পাওয়া যায় অনেকটাই।
এ ছাড়া নানা ধরনের পুষ্টিগুণেও ভরপুর সজনে ফুল। এতে আছে ভিটামিন এ, বি ১, বি২, বি৩, সি, ক্যালশিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম। পাশাপাশি শরীরে প্রোটিনেরও জোগান দেয় এই ফুল। বিভিন্নভাবেই আপনি সজনে ফুল খেতে পারেন। তবে সজনে ফুলের বড়া এবং সজনে ফুল ভাজা বাঙালি প্রতিটি বাড়িতেই বেশ জনপ্রিয় খাবার। তবে সব সময়ে ভাজাভুজি খাওয়া শরীরের পক্ষে ভালো নয়। তাই ভাজার পরিবর্তে সজনে ফুল, বেগুন, আলু আর মটরশুঁটি দিয়ে হালকা কোনো চচ্চড়ি বানিয়ে নিতে পারেন। আলু আর সজনে ডাঁটা দিয়ে ঝোল বানালে তার মধ্যেও দিয়ে দিতে পারেন সজনে ফুল। সজনে ফুলের উপকারিতা পেতে এর ভর্তাকেও সপ্তাহের একদিন রাখতে পারেন আপনার ডায়েট লিস্টে। সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিংগা ওলেইফেরা। ইংরেজিতে গাছটিকে মিরাকল ট্রি বা অলৌকিক গাছ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজনে, এর ফুল ও পাতাকে সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সজনে পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব। এর ফুল, পাতা, ফল সব কিছুই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এর স্বাস্থ্য উপকারিতা বলে শেষ করার মতো নয়। অন্ধত্ব দূর করতে বেশি কার্যকরী, কারণ গাজরের চেয়ে বেশি ভিটামিন এ থাকে এর পাতায়। এছাড়া সজনে পাতা আ্যনিমিয়া দূর করে, কারণ এতে শাকের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি আয়রন আছে। কলা থেকে বেশি পটাশিয়াম থাকে সজনে পাতায়। নিয়মিত এই পাতা খেলে হার্ট ভালো থাকে, উচ্চ রক্তচাপ কমে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে, কোলেস্টেরেল কমায় ও হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।সজনে পাতার ভর্তা থেকে শুরু করে এর বড়া সবার কাছেই প্রিয়। তবে যারা রান্না করে এই পাতা খেতে চান না তারা খুব সহজেই এই পাতার গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে পান করে থাকেন।

Side banner