এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকদের চুক্তিবদ্ধ চাষী হিসেবে কাজে লাগিয়ে বীজ আলু উৎপাদনে চমক সৃষ্টি করেছেন নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় বিএডিসি খামারের উপ-পরিচালক আবু তালেব মিঞা।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বাস্তবায়নাধীন ‘মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ’ প্রকল্পের আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের উৎপাদন মৌসুমে নীলফামারী জেলা জোনের ৩০টি ব্লকে মোট ৭৬ জন চুক্তিবদ্ধ চাষীর মাধ্যমে ৭৫৩ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদন কর্মসূচি চলছে।
জানা গেছে, চাষকৃত ৪১৮ একর জমিতে ১২টি জাতের ভিত্তি যথাক্রমে এস্টারিক্স, মিউজিকা, গ্রানুলা, কুইনঅ্যানি, কারেজ, কুম্বিকা, এলোয়েট, ৭ ফোর ৭, সানতানা, কার্ডিলাল, ডায়মন্ড, বারি আলু-৬২ এবং ৩৩৫ একর প্রত্যায়িত জমিতে ১১টি জাতের বীজ আলু যথাক্রমে মিউজিকা, সানতানা, কারেজ এস্টারিক্স, গ্রানোলা, কুম্বিকা, সানসাইন, বারি আলু-৭২, ভ্যালেন্সিয়া, ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল উৎপাদন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে কর্তৃপক্ষ। যা থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মেট্রিকটন বীজ আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এসব বাজারজাত করার পর প্রায় ১৬ কোটি টাকা বীজ আলুর মুল্য বাবদ পরিশোধ করা হবে। এরমধ্যে প্রায় ৮ কোটি টাকা আয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে শস্যবন্ধকি ঋণের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ চাষীদের বীজ, সার, কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সার্বক্ষনিক তত্ত্বাবধানের জন্য একজন উপ-পরিচালক, একজন সহকারী পরিচালক ও দুইজন উপ-সহকারী পরিচালক প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট জোনের প্রত্যেক ব্লকের সমস্যা চিহ্নিত করে পরামর্শ প্রদান ও উৎপাদন কার্যক্রম তদারকি করে থাকেন।
প্রসঙ্গতঃ বিগত ২০২৩-২৪ উৎপাদন মৌসুমে ২৯৫.৪০ একর জমিতে উৎপাদিত বীজ আলুর পরিমাণ ছিলো ১ হাজার ৫২২ দশমিক ৮৫০ মেট্রিকটন। এটির আয় থেকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ২ কোটি ১২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪১ টাকা শষ্যবন্ধকি ঋণ পরিশোধ করা হয় এবং চুক্তিবদ্ধ ৩১ জন চাষীকে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ৮৫০ টাকার চেক প্রদান করা হয়। এতে বীজ আলু উৎপাদন খরচ ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে একর প্রতি ১ লাখ ১২ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
এবিষয়ে ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক জানান, উত্তরের জেলা নীলফামারীতে বীজ আলু উৎপাদন জোন ভৌগোলিকভাবে এমন একটি এলাকায় অবস্থিত যেখানে বীজ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া বিদ্যমান রয়েছে। ভবিষ্যতে নীলফামারী বীজ আলু উৎপাদন জোন বাংলাদেশের মধ্যে একটি সম্ভাবনাময় জোন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। বর্তমানে শিক্ষিত বেকার যুবকদেরকে বীজ আলু উৎপাদনে নিয়োজিত করে অত্র এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে দণ্ডায়মান ফসলের সার্বিক অবস্থা ভালো পর্যায়ে রয়েছে এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গুণগত মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। উৎপাদিত বীজআলু দেশের সাধারণ চাষীদের আলু উৎপাদনে সরবরাহের ঘাটতি পুরনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। উৎপাদিত বীজ আলু সংরক্ষণের জন্য জেলার গাছবাড়ি সংলগ্ন নীলফামারী বীজ বর্ধন খামারের অভ্যন্তরে ২ হাজার মেট্রিকটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন একটি বীজ আলু হিমাগারের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :