গত কয়েকদিন থেকে গাইবান্ধায় শীতের হিমেল হাওয়া সূর্যের দেখা মেলেনি। শুক্রবার দিনের বেলায় সূর্যের একটু দেখা মিললেও সন্ধ্যার পর থেকেই যেন বাইরে বের হওয়ায় দায় হয়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের। সকাল থেকে ছিল কুয়াশার দাপট। শুক্রবার দিনের বেলায় একটু সূর্যের দেখা মিললে মানুষ যেন স্বস্তি ফিরে পায়। কিন্তু সূর্যের আলো নিভে যেতেই কনকনে হিমেল হাওয়ায় হার কাঁপানো ঠান্ডায় কাঁপছে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো। সেখান থেকে বাদ যায়নি গাইবান্ধা জেলার মানুষগুলো। এমন শীতের গভীর রাতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন গাইবান্ধার মানবিক জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ।
এ সময় জেলা প্রশাসক নিজ হাতে ছিন্নমূল অতি দরিদ্র মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিবাগত গভীর রাতে গাইবান্ধা সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের গড়দিঘী আশ্রয়ণে বসবাসরত পরিবার, বোয়ালী ইউনিয়নের মদিনাতুল উলুম নূরানীয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্র, পুরাতন বাজার ও পুলবন্দি এলাকায় সাধারণ দিনমজুর, অটোচালক, ভ্যানচালক, কুলি, মৎস্যজীবী, হোটেল কর্মচারীর মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।
সাধারণ মানুষের মাঝে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করেন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সদর উপজেলা প্রশাসক মো: মাহমুদ আল হাসান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মো: রিয়াজুল ইসলাম, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়নের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ জুবায়ের রহমান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কনকনে ঠান্ডায় জেঁকে বসেছে শীত। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার অনেক অসহায়, গরিব-দুঃখী শীতার্ত মানুষগুলো। শীতার্ত মানুষের কষ্ট লাঘবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গভীর রাতে ঘুরে ঘুরে শীতার্ত মানুষের গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেন জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ।
কনকনে শীতের মধ্যে হঠাৎ গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক এর হাত থেকে শীতবস্ত্র (কম্বল) হাতে পেয়ে ছিন্নমূল দুঃস্থ, অসহায় মানুষেরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকেই কম্বল পেয়ে আবেগে উচ্ছ্বাস ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শীতবস্ত্র পাওয়া ব্যক্তি জানান আমরা যে জেলা প্রশাসকের হাত থেকে গভীর রাতে শীতবস্ত্র (কম্বল) পাব এটা কখনো কল্পনায় করতে পারিনি। এমন জেলা প্রশাসক গাইবান্ধার জন্য সব সময় কল্যাণ চিন্তা করবে ও গাইবান্ধার উন্নতিতে সবসময় অবদান রাখবে এই প্রত্যাশা কামনা করছি।
আবেগ আপ্লুত হয়ে কয়েকজন আরো বলেন যেখানে একজন জেলার জেলা প্রশাসক প্রশাসনিকভাবে নানানভাবে ব্যস্ত থাকেন, সেখানে শত ব্যস্ততার মাঝে থাকা সত্ত্বেও আমাদের কাছে রাতে এসে নিজ হাতে শীতবস্ত্র বিতরণ করে গাইবান্ধা সদরে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। এমন জেলা প্রশাসক গাইবান্ধার জন্য কল্যাণকর।
এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ বলেন, গত কয়েক দিন যাবৎ গাইবান্ধায় তীব্র শীত পড়েছে। শীতে দরিদ্র মানুষদের অনেকেরই শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। শীতে কোনো দুঃস্থ পরিবার যেন কষ্ট না পায়, সেজন্য অন্তবর্তী কালীন সরকারের নির্দেশনায় তাদের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে এসেছি। প্রকৃত ছিন্নমূল ও দরিদ্রদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণের লক্ষ্যে রাতের অন্ধকারে বের হয়ে দুই শতাধিক শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ আরো বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার যে নির্দেশনা জেলা প্রশাসনকে প্রদান করে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে রাতহোক অথবা দিন আমরা সেই নির্দেশনা পালনে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখার চেষ্টা করি মাত্র। অন্তবর্তীকালীন সরকার চায় শীতে কোন মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। অন্তর্বতীকালীন সরকারের নির্দেশনায় রাতে শীতার্ত মানুষের মাঝে এসে কম্বল বিতরণ করেছি।
উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যেই সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও সদর উপজেলার প্রশাসক মো. মাহমুদ আল হাসান স্যারের নির্দেশনায় সদর উপজেলা ১৩ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা সহ ৪ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক স্যার নির্দেশনা দিয়েছেন শীত যতদিন থাকবে গাইবান্ধা জেলার শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রাখতে হবে। শীতে তৃণমূল অসহায় মানুষ যেন কোন ভাবেই শীতবস্ত্র ও গরম কাপড়ের অভাবে কষ্ট না পায়।
আপনার মতামত লিখুন :