২৩ বছরের সাজা ভোগ করে গত ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পেয়েছেন ইসমাইল হোসেন। একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল তার। দীর্ঘ সময় কারাভোগের কারণে তার জীবন থেকে হারিয়ে যায় অনেক কিছু। কারাগারের শৃঙ্খলা মেনে চলা এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় মুক্তির পর পেলেন নতুন বাড়িসহ জীবনমুখী সহায়তা।
ইসমাইলকে পুনর্বাসন করতে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল আউয়ালের উদ্যোগে সবজি বিক্রির জন্য একটি ভ্যান, মূলধন হিসেবে নগদ টাকা ও বসবাসের জন্য একটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। ইসমাইল জেলার সাপাহার উপজেলার কলমুডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তার বর্তমান বয়স ৪৫ বছর।
তিনি বলেন, পারিবারিক কলহের জেরে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় ১৯৯৯ সালে জড়ানো হয় তাকে। সেই মামলায় ১৯ বছর বয়সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় ইসমাইলকে। এরপর থেকে জেলা কারাগারেই বন্দি ছিলেন।
তিনি বলেন, মামলা চলার সময় আদালতে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। আইনজীবীর খরচ ও মামলার অন্যান্য ব্যয় মেটাতে পরিবারের শেষ সম্বল ২ বিঘা জমিও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। খরচ চালাতে ব্যর্থ হয়ে একসময় বিচারের আশা ছেড়ে দেয় স্বজনরা।
ওই সময় ইসমাইলের স্ত্রী ও এক ছেলে সন্তান ছিল। পরবর্তী সময়ে স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যান। ২৩ বছরে অনেক কিছু ঘটে গেছে তাদের পরিবারে। একটা সময় জেলখানায় তাকে আর কেউ দেখতেও আসতেন না। কিন্তু দায়িত্বশীল আচরণ ও শৃঙ্খলা মেনে চলায় কারাগারে অনেকের প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন।
কারাগারে দর্জির কাজ করতেন ইসমাইল। বন্দি জীবনেই শিখেছেন সেলাই। পরে ২৩ বছরে ধীর ধীরে দক্ষ কারিগর হয়ে ওঠেন। কারারক্ষী ও বন্দিদের পোশাক তৈরি করে দিতেন। তবে কারাভোগের শেষের দিকে সেলাই খুব কমই করতেন, ছিলেন কাটার মাস্টার। আগের মতো আর চোখে ভালো দেখতে পান না। ফলে দর্জির কাজ করা তার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। তাই জেল থেকে মুক্ত পেয়ে কী করে চলবেন সেটা নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েন ইসমাইল। জীবনের এ পর্যায়ে এসে সহযোগিতা ছাড়া সমাজে আর প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়। তাই জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার আগে বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে সবজি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর সেই আবদার তুলে ধরেন জেল কর্মকর্তাদের কাছে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, সমাজে প্রতিটি মানুষের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার ও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্ন থাকে। ইসমাইলের জীবন থেকে ২৩টি বছর ঝড়ে গেছে। ইসমাইল হোসেন আগামীতে যাতে কোনো অপরাধে জড়িয়ে না পড়েন, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ইসমাইলের হাতে নতুন ঘরের চাবি, ভ্যান এবং সবজির ব্যবসা করার জন্য নগদ সাড়ে সাত হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :